ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় এক অদ্ভুত ঘটনায় পুলিশ হিমশিম খেয়েছে। চুরির অভিযোগে সন্দেহভাজনদের আটক করতে গিয়ে থানার সরকারি পিকআপ ভ্যানের চাবি রহস্যজনকভাবে চুরি হয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আলোচনা ও কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের হরিণধরা পূর্বপাড়া গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে ওই গ্রামের প্রবাসী জহিরুল ইসলামের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির পর দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থলে আগুন ধরিয়ে দেয়, এতে ঘরের বেশ কিছু আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
পরে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্থানীয়রা পাঁচজনকে আটক করে রাখেন। খবর পেয়ে সোমবার বিকেলে রৌমারী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই পাঁচজনকে হেফাজতে নেয় এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়।
এ সময় ব্যবহৃত থানার পিকআপ ভ্যানের চালক গাড়ির চাবি হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি টের পান। হঠাৎ চাবি নিখোঁজ হওয়ায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। চালক ও সঙ্গে থাকা সদস্যরা দ্রুত চাবি খোঁজাখুঁজি শুরু করেন, তবে প্রথম দিকে তা কোথাও পাওয়া যায়নি।
চাবি হারানোর কারণে পুলিশ পিকআপ ভ্যানটি চালাতে না পারায়, থানা থেকে ওসির সরকারি গাড়ি এনে আটক ব্যক্তিদের থানায় নেওয়া হয়। দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে পিকআপটি ঘটনাস্থলে আটকা পড়ে থাকে, যা দেখে স্থানীয় লোকজনের ভিড় জমে যায়। কেউ কেউ ঘটনাটিকে কৌতুক হিসেবে দেখলেও অনেকে বিষয়টিকে নিরাপত্তা ত্রুটির বড় উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন।
অবশেষে সন্ধ্যার দিকে পুলিশের অন্য সদস্যরা গিয়ে পাশের জঙ্গল থেকে হারানো চাবিটি উদ্ধার করেন। ধারণা করা হচ্ছে, চাবিটি হয়তো অসাবধানবশত পড়ে গিয়েছিল বা কেউ ইচ্ছে করে ফেলে দিয়েছিল।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মালিক বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “চুরির অভিযোগে সন্দেহভাজনদের আনতে গিয়ে আমাদের পিকআপ ভ্যানের চাবি হারিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর ঘটনাস্থলের পাশের একটি জঙ্গল থেকে চাবিটি উদ্ধার করা হয়।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. কুদ্দুস আলী বলেন, “এমন ঘটনা আমরা জীবনে দেখি নাই। চুরির আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের গাড়ির চাবিই হারায়! এটা সত্যিই মজার আবার অদ্ভুতও।”
অন্যদিকে, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাঠ পর্যায়ের পুলিশের এমন অসতর্কতা ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে। তাদের মতে, “সরকারি গাড়ি ও সরঞ্জাম ব্যবহারে পুলিশকে আরও সাবধান হতে হবে। এতে শুধু সময় নষ্ট হয় না, নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ে।”
চুরির ঘটনার মূল তদন্ত এখনো চলছে। পুলিশ বলছে, আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং আগুন লাগানোর ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তবে চাবি হারানোর ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক বিভাগীয় তদন্তের কথা জানা যায়নি।
রৌমারীর স্থানীয় সাংবাদিক মহলও বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, পুলিশি কর্মকাণ্ডে এমন অবহেলা জনগণের আস্থা কমিয়ে দিতে পারে।
এদিকে, প্রবাসী জহিরুল ইসলামের পরিবার বলছে, তাদের বাড়িতে চুরির ঘটনায় অনেক মূল্যবান সামগ্রী হারিয়েছে। আগুনে তাদের ঘরের বেশিরভাগ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরিবারটি দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে পুনরায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হবে।
এভাবে কুড়িগ্রামের একটি ছোট্ট গ্রামে ঘটনার পর ঘটনা যেন একের পর এক নাটকীয় মোড় নিচ্ছে। চুরির মামলার পাশাপাশি পুলিশের চাবি হারানোর ঘটনাও স্থানীয়দের মুখে মুখে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।