
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনাহাট মোস্তফাবিয়া কামিল মাদ্রাসার মুফাসসির এবং হাতীবান্ধা উপজেলা ইমাম কল্যাণ সমিতির সভাপতি মাওলানা মোঃ আব্দুল কাদের সিদ্দিক চেক জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। একইসঙ্গে আদালত তাঁকে এক মাসের মধ্যে পনেরো লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, ৯৯/২৫ নম্বর মামলাটির রায় ঘোষণা করেন লালমনিরহাট সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। গত ১৬ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) আদালতের মাননীয় বিচারক এই রায় প্রদান করেন। রায়ের সময় অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল কাদের সিদ্দিক আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
মামলার বাদী হিসেবে রয়েছেন একই মাদ্রাসার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র রায়। তিনি দীর্ঘদিন আগে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চেক প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল কাদের সিদ্দিক তার ব্যক্তিগত দেনা পরিশোধের উদ্দেশ্যে বাদীর নিকট একটি চেক প্রদান করেন। কিন্তু ব্যাংকে উপস্থাপনের পর সেই চেকটি বাউন্স হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি আদালতের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় যায়।
দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মাওলানা আব্দুল কাদের সিদ্দিককে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, তিনি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ জমা না দেন, তবে অতিরিক্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তাঁকে পলাতক ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে। তাঁর অবস্থান সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মামলার রায় সম্পর্কে অভিযুক্তের পক্ষের আইনজীবী নিশ্চিত করেছেন যে, আদালত এই রায় প্রদান করেছেন এবং তাঁদের পক্ষ থেকে আপিলের প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে বাদী নারায়ণ চন্দ্র রায় বলেন, “আমি দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য আমি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। অবশেষে ন্যায়বিচার পেয়েছি।”
অন্যদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাওলানা আব্দুল কাদের সিদ্দিক কাকিনাহাট মোস্তফাবিয়া কামিল মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন। তিনি একই সঙ্গে হাতীবান্ধা উপজেলা ইমাম কল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এর আগে আর কোনো মামলা বা অভিযোগ ছিল না বলে জানিয়েছেন সহকর্মীরা।
তবে কিছু স্থানীয় ধর্মীয় নেতা এই রায়কে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁদের দাবি, “যদি তিনি প্রকৃতপক্ষে ভুল করে থাকেন, তাহলে আইন অনুযায়ী বিচার হওয়া উচিত, কিন্তু রায়ের আগে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে অভিযুক্ত করা ঠিক হয়নি।” অন্যদিকে, অনেকেই মনে করছেন, এই রায় সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিরা ভবিষ্যতে সতর্ক হবেন।
অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল কাদের সিদ্দিকের বিরুদ্ধে দেওয়া রায়ের ফলে স্থানীয় শিক্ষা ও ধর্মীয় মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় দায়িত্বে থাকা একজন ব্যক্তির কাছ থেকে এমন আচরণ কাম্য নয়। অন্যদিকে অনেকে বলছেন, আদালতের রায়ই সত্যের প্রতিফলন।
রায়ের পর মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, “আমরা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। এটি প্রমাণ করেছে যে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” তিনি আরও বলেন, “অভিযুক্ত পক্ষ চাইলে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন, তবে এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো আবেদন করেননি।”
এদিকে, রায়ের বিষয়টি জানার পর স্থানীয় সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আদালতের ভূমিকাকে প্রশংসা করেছেন, আবার কেউ আবেগপ্রবণ মন্তব্য করে অভিযুক্তের প্রতি সহানুভূতিও জানিয়েছেন।
মামলাটির রায় কার্যকর হলে, অভিযুক্তকে এক মাসের মধ্যে লালমনিরহাট জেলা কালেক্টরের অফিসে নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ জমা দিতে হবে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র।