
ক্রাইম এডিশন, লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোলাপাড়া এলাকায় শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড জ্বরের টিকা নেওয়ার পর ১১ জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে এই ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে দুপুরে শিক্ষার্থীদেরকে টাইফয়েড টিকা প্রদান করা হয়। টিকা গ্রহণের কিছুক্ষণ পরই বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শারীরিক সমস্যার মুখোমুখি হন। তাদের মধ্যে অনেকে মাথা ব্যথা, হাতব্যথা এবং বমি বমি ভাব অনুভব করতে শুরু করে।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা দ্রুত পরিস্থিতি সামলান এবং অসুস্থ শিক্ষার্থীদের হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। তাদের মধ্যে নয়জন প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও দুইজন শিক্ষার্থী বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
দোলাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রেখা মনি জানায়, “টিকা নেওয়ার পর আমার মাথা ও হাতে ব্যথা শুরু হয়, বমি বমি ভাবও হচ্ছিল। পরে শিক্ষক আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এখন ধীরে ধীরে ভালো লাগছে।”
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, “আজ আমাদের স্কুলের ১১ জন শিক্ষার্থী টাইফয়েড টিকা নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আমরা দ্রুত তাদের হাসপাতালে পৌঁছে দিই। এখন তাদের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল।”
হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শরিফুল আমিন এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সরকার শিশুদের মধ্যে টাইফয়েডজনিত অসুস্থতা ও মৃত্যুহার কমানোর জন্য সারাদেশে মাসব্যাপী ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন ২০২৫’ চালু করেছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই কার্যক্রমে মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিশুদের মধ্যে টাইফয়েড প্রতিরোধী প্রতিষেধক দেওয়া এবং তাদের সুস্থ্য রাখা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাদান কার্যক্রম সাধারণত নিরাপদ হলেও কখনও কখনও স্বল্পপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন মাথা ব্যথা, বমি ভাব বা সামান্য জ্বর। এই ধরনের প্রতিক্রিয়া সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য হয় এবং চিকিৎসা নিলে দ্রুত কমে যায়। তবে বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
এই ঘটনায় অভিভাবক ও স্থানীয়রা তাদের সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা চাইছেন, ভবিষ্যতে স্কুলে টিকা দেওয়ার আগে আরও সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় আরও শক্তভাবে করা হবে।
স্থানীয়রা আশা করছেন, যারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। এছাড়াও তারা চাইছেন, সরকারি পর্যায়ে যথাযথ অনুসন্ধান করে টিকার মান ও বিতরণ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হোক।
উল্লেখ্য, টাইফয়েড টিকা হলো শিশুদের জন্য জরুরি একটি প্রতিষেধক যা টাইফয়েড জ্বর থেকে রক্ষা করে। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি হওয়ায় সরকারী উদ্যোগে মাসব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচি শুধুমাত্র প্রতিষেধক প্রদানই নয়, শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে।
শিক্ষক ও অভিভাবকরা মনে করছেন, টিকাদান কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ হলেও স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা বজায় রাখা প্রয়োজন। এই ঘটনার পর বিদ্যালয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরও বেশি নজরদারি ও তত্ত্বাবধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
সবশেষে, এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা ও আতঙ্কের সমন্বয় দেখা গেছে। আশা করা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের সমস্যার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে।