নিজস্ব সংবাদদাতা, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলায় একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অষ্টম শ্রেণির এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছেন। মৃত ছাত্র আশিক (১৫) স্থানীয় বাসিন্দা এবং গছিডাঙ গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে। বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে ভুরুঙ্গামারীর ফুটানি বাজারের পশ্চিম পাশে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশিক বিকেল বেলা বাইসাইকেলযোগে বাজার করতে যান। তিনি বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই ভুরুঙ্গামারী গামী একটি দ্রুতগতির ড্রাম ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়। দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আশিকের মরদেহ উদ্ধার করে এবং তার পরিবারকে হস্তান্তর করে।
ভুরুঙ্গামারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল হেলাল মাহমুদ জানান, “দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। নিহত স্কুলছাত্রের মরদেহ পরিবারকে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো বিস্তারিতভাবে তদন্ত করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, আশিক খুবই মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছাত্র ছিলেন। প্রতিদিনের মতো তিনি বিকেলে বাজারে যেতেন। স্থানীয়দের মতে, ওই এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য বড় যানবাহনের দ্রুতগতি অনেকদিন ধরেই একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে স্কুলছাত্র ও পথচারীদের জন্য এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
দুর্ঘটনার পর এলাকার মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং স্কুলছাত্র আশিকের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে এই দুর্ঘটনার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং স্থানীয় কমিউনিটিতে এটি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই জানিয়েছেন, সড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করার প্রয়োজন রয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ঘটনা পুনরায় না ঘটে।
সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যমান। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সড়কের গতি নিয়ন্ত্রণ, ট্রাক চালকদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই ধরনের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। এছাড়া, স্কুলছাত্রদের সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষা দেওয়াও জরুরি।
কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী-সোনাহাট স্থলবন্দর সড়কটি ট্রাক চলাচলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট হলেও এই রাস্তায় নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব চোখে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রায়শই এখানে গাড়ির অস্বাভাবিক গতিতে চলাচল এবং পায়ে হেঁটে চলাচলকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যাতে এই সড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করা হয়।
নিহত আশিকের পরিবার গভীর শোকাহত। তার পিতা শহিদুল ইসলাম জানান, “আমাদের ছোট ছেলেটিকে হারানোর কষ্ট অতি কঠিন। আশা করি, সরকারের পক্ষ থেকে এই দুর্ঘটনার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” স্থানীয় স্কুল শিক্ষক ও সহপাঠীরাও আশিকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, আশিক ছিলেন অত্যন্ত অনুপ্রেরণামূলক এবং পড়াশোনায় মেধাবী ছাত্র।
এই ঘটনা একবার আবারো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কঠোর আইন প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরি। দ্রুতগামী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের কারণে সাধারণ পথচারী, বিশেষত শিশুদের জীবন বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা না হলে এই ধরনের দুঃখজনক দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি অব্যাহত থাকবে।
কুড়িগ্রামের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা শুধু পরিবার নয়, পুরো কমিউনিটিকে শোকের ছায়ায় ফেলেছে। স্থানীয়রা আশা করছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপ এবং সড়কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব হবে।