নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ:
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এক মৃত তরুণীর মরদেহের সঙ্গে অমানবিক যৌন নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে হালুয়াঘাট উত্তাল হয়ে উঠেছে। এই বিভীষিকাময় ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে (২৩ অক্টোবর ২০২৫) উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং নিহত তরুণীর পরিবারের সদস্যরা এতে অংশ নেন। তাদের একটাই দাবি—এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
বক্তাদের ক্ষোভ ও দাবিতে গর্জে ওঠে হালুয়াঘাট
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি এক নজিরবিহীন ও জঘন্য অপরাধ। মৃত একজন নারীর মরদেহের ওপর এমন পাশবিক আচরণ শুধু আইনভঙ্গ নয়, এটি মানবতার প্রতি নির্মম আঘাত। তারা বলেন, ‘লাশবাহক আবু সাঈদ যেভাবে বিকৃত মনোভাব নিয়ে এই কাজটি করেছে, তার জন্য একমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হতে পারে উপযুক্ত শাস্তি।’
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, “মর্গ একটি সংরক্ষিত ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রিত স্থান। সেখানে এমন ঘটনা ঘটানো প্রশাসনের ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই নয়।” তারা মর্গের নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্য ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বক্তাদের দাবি—দায়িত্বে অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঘটনার সময়রেখা
ঘটনার ধাপগুলো নিচের মতো:
১. ১৯ অক্টোবর ২০২৫, রবিবার: পারিবারিক কলহের কারণে হালুয়াঘাটের ২০ বছর বয়সী তরুণী আত্মহত্যা করেন।
২. ২০ অক্টোবর ২০২৫, সোমবার: হালুয়াঘাট থানা পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
৩. ২১ অক্টোবর ২০২৫, মঙ্গলবার: ময়নাতদন্ত চলাকালে চিকিৎসকরা মৃতদেহে যৌন নির্যাতনের আলামত পান। তদন্তে জানা যায়, মরদেহ বহনের দায়িত্বে থাকা ডোম আবু সাঈদ এই জঘন্য কাজটি করেছে।
৪. ২৩ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার দুপুর: স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
বিক্ষোভ মিছিল ও জনমতের প্রতিক্রিয়া
মানববন্ধন শেষে অংশগ্রহণকারীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। মিছিলটি উপজেলা পরিষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা শ্লোগান তোলেন—“মানবতার লঙ্ঘনকারীর বিচার চাই”, “মৃত দেহে নির্যাতন, মানবতার লজ্জা”, “দোষীর ফাঁসি চাই”।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই ঘটনার পর পুরো এলাকা হতবাক। এমন নৃশংস কাজ যেন আর কেউ করতে সাহস না পায়, সে জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রশাসনের অবস্থান ও তদন্ত
জেলা প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঘটনার পর অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ভবিষ্যতে মর্গের নিরাপত্তা জোরদারে নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃত আবু সাঈদ ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। আরও কেউ জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জনমনে আতঙ্ক ও নৈতিক প্রশ্ন
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই লিখেছেন—“এই অপরাধ শুধু আইনের আওতায় নয়, মানবতার আদালতেও বিচার হওয়া উচিত।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নৈতিক শিক্ষা ও কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঠেকানো সম্ভব নয়।
এ ঘটনায় দেশজুড়ে নারী নিরাপত্তা, মর্গ ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।