
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
গত ২৫ অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রাত আনুমানিক ২২:৫০ ঘটিকায়, ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানা-র অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন ও তার নেতৃত্বে সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স চান্দিনা থানার মাধাইয়া বাজার এলাকায় ঢাকাগামী লেনে একটি পূর্বনির্ধারিত অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানটি গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠিত ছিল।
অভিযানে, মাদকবিরোধী সংবাদের ভিত্তিতে চৌদ্দগ্রামের ৩ নং কালিকাপুর ইউনিয়নের জামমুড়া সংলগ্ন পোস্ট-নোয়াবাজার এলাকা থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হলো মোঃ রাহাত হোসেন (২০), পিতা-মৃত সাইফুল ইসলাম, মাতা-পারভীন বেগম, সংশ্লিষ্ট ঠিকানা সংলগ্ন জামমুড়া, পোস্ট-নোয়াবাজার, ৩নং কালিকাপুর ইউনিয়ন, থানা-চৌদ্দগ্রাম, জেলা-কুমিল্লা।
তার সঙ্গে সঙ্গে একটি কালো রঙের ট্রাভেল ব্যাগ থেকে আনুমানিক ৬ (ছয়) কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনার পর গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি এবং উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিষয়টি বর্তমানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
অভিযান-পরবর্তী প্রাথমিক বর্ণনায় জানা গেছে, গোপন সূত্রে পাওয়া খবরে ব্যক্তিটিকে সনাক্ত করে হাইওয়ে পুলিশ দ্রুত সচল হয়। সে-ক্ষেত্রে ঢাকা অভিমুখে যাত্রীবাহী অথবা যাতায়াত মূলক একটি সপ্তাহান্তিক রুট ধরা হয় যেখান থেকে ট্রাভেল ব্যাগটি ওই ব্যক্তির হস্তান্তরে ছিল। পুলিশের অভিযান শুরু হলে অভিযুক্ত দ্রুত পালানোর চেষ্টা করলেও চৌদ্দগ্রাম-চান্দিনা সীমান্তবর্তী মাধাইয়া বাজার এলাকায় তাঁকে থামিয়ে রাখা হয় এবং ব্যাগে থাকা সরঞ্জামাদি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ গাঁজা পাওয়া যায়।
এই ধরণের নিজস্ব পরিকল্পিত অভিযানে হাইওয়ে থানা পুলিশের তৎপরতা সমাজে মাদকনিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পুলিশ সূত্র মতে, গাঁজার এই চালানটি হয়তো রাজধানী ঢাকা অথবা অন্য কোনো বৃহত্তর শহরে বিতরণের উদ্দেশ্যে রপ্তানির আগে ধরা পড়েছে। তাই মামলাটি শুধুই একজন গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ না থেকে, মাদক চক্রের বড় কোনো অংশ খোঁজার জন্যও তদন্ত বিস্তৃত করা হয়েছে।
নগরীর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক পথে অবৈধ বন্দোবস্ত প্রতিহত করার ক্ষেত্রে এই ধরণের হাইওয়ে অভিযান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মূল চালান ধরা পড়লে মাদকদ্রব্য বাজারে প্রবেশ ও প্রচলনের সম্ভাবনা কমে যায় এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। এখানে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও তৎপরতা সক্রিয় থাকলে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলো দ্রুত মাদক পরিবহন-হবিগ্রস্ত রুট হিসেবে পরিণত হয় না।
এই অভিযানে হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ রুহুল আমিন বলেন, “গোপন খবরের ভিত্তিতে আমরা দ্রুত ও নির্ভুলতায় কাজ করেছি, এবং অভিযুক্তকে ধরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো হয়তো বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি, তাই আমরা মাদক চক্রের সম্ভাব্য সহযোদ্ধাদেরও শনাক্তের চেষ্টা চালাচ্ছি।” তিনি আরও জানান, “আমরা সাধারণ জনগণের সহযোগিতা কামনা করি, মাদক পরিবহন বা বিক্রয়ের ঘটনা দেখলে দ্রুত হাইওয়ে থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনুরোধ রাখি।”
উল্লেখ্য, মণিপুর থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ‘হাইওয়ে রুট’ হিসেবে পরিচিত ড্রাগ পরিবহনের পথগুলো সাধারণত কঠোর নজরদারির চাহিদা রাখে। বিশেষ করে রাতে যেসব গাড়ি রুটযুক্ত লেন ধরে চলাচল করে, সেগুলো মূলত মাদকবাহী বা অবৈধ পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। মধ্যরাতের অভিযানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে এই ধরনের রুট ঘনঘন নজরে আসে। আর হাইওয়ে পুলিশের এই ধরনের রাতভর অভিযান মাদক চেইন চেইন লিংক বিচ্ছেদে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।
অভিযান সূত্রে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পর থেকে মাঝরাতের সময়কালে যাত্রীবাহী লেনে সন্দেহভাজন ব্যাগ ও যাত্রীদের ওপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। পুলিশের অভিজ্ঞতা বলছে, সাধারণ যাত্রীদের সাথে সদৃশ অভিনয় করে মাদক পরিবহনকারীরা নিজেকে যাত্রীরূপে মিশিয়ে নেয়। সেই কারণেই লেকে যাত্রীদের তথ্য যাচাই ছাড়াই চলাচল করতে দেওয়া হয় না। এ ধরণের তল্লাশি ও মনিটরিং কার্যক্রম পরিবহন রুটের নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এই সফল অভিযানের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। মাধাইয়া বাজার এলাকার সাধারণ মানুষ জানান, “এ ধরনের অভিযান আমাদের এলাকাটির নিরাপত্তা বাড়িয়েছে। আমরা আশাবাদী, আর এমন অভিযান অব্যাহত থাকলে মাদক পরিবহনকারীরা আমাদের এলাকায় সহজে হাত পাকাতে পারবে না।”
নগর পুলিশের পাশাপাশি হাইওয়ে থানা পুলিশের সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান করা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, শুধু গ্রেফতারই যথেষ্ট নয় — আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাপেক্ষ বিষয়গুলো যেমন মাদক চক্র, অবৈধ লেনদেন ও ট্রান্সপোর্ট রুট খুঁজে বের করতেও ক্রমাগত সচল ও সক্রিয় থাকতে হবে। এই অভিযানে ধরা পড়া চালান এবং গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি ও নেটওয়ার্কের তথ্য অনুসন্ধান ভবিষ্যতে আরও বড় সফলতা নিশ্চিত করবে।
এই প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষেরও দায়িত্ব আছে — কোনো সন্দেহজনক সুযোগ দেখে অবিলম্বে পুলিশকে জানানো। স্থানীয় কমিউনিটি পুলিশিং শক্তিশালী হলে হাইওয়ে রুটে পরিবহনকারী মাদকচক্রগুলো নিরুৎসাহিত হবে। এই ধরনের সক্রিয় উদ্যোগই পারে মাদকদ্রব্য পরিবহন, বিক্রয় ও পরিবেশে প্রবেশকারী চালানগুলোর পথ বন্ধ করে দিতে।
নিষ্ক্রিয়তা থেকে উদ্যোগে পরিবর্তন আনলেই সম্ভব হবে সম্মিলিতভাবে সাজগোজের পরিবেশ, যেখানে রাস্তাঘাট নিরাপদ থাকবে, পরিবহন রুটে অবৈধ কার্যকলাপ কমবে, আর সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরাফেরা করতে পারবে। হাইওয়ে থানার এই সফল অভিযান সেই দৃষ্টান্ত গড়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধরনের অভিযান সক্রিয়ভাবে অব্যাহত থাকুক—সেই প্রত্যাশা করি।