ক্রাইম এডিশন, অনলাইন ডেস্ক:
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় অরক্ষিত গভীর নলকূপের গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদকে উদ্ধার অভিযান শেষে তুলে এনেছে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রায় ৩২ ঘণ্টার টানা চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত দশটার দিকে তাকে বের করে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। উদ্ধার হওয়ার পর শিশুটি জীবিত আছে কি না, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। চিকিৎসকেরা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।
বুধবার দুপুরে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সাজিদ তার মা ও ভাইকে নিয়ে বাড়ির পাশের একটি জমি পার হচ্ছিল। জমিটি আগেই খড় দিয়ে ঢাকা থাকায় মা বুঝতে পারেননি যে নিচে রয়েছে একটি গভীর, অরক্ষিত নলকূপের পরিত্যক্ত গর্ত। হাঁটার সময় হঠাৎ করেই সাজিদ খড়ের স্তরের নিচে লুকিয়ে থাকা ওই গর্তে পড়ে যায়। শিশুটি পড়ার পরপরই পেছন থেকে “মা মা” বলে চিৎকার শুনে তার মা ফিরে তাকান। মুহূর্তেই খড় সরিয়ে তিনি দেখতে পান ভয়াবহ সেই গর্ত—যেটি যেন মৃত্যুকূপের মতো নিচের দিকে নেমে গেছে।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন, স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। প্রথমে স্থানীয়রা নিজেদের উদ্যোগে শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করলেও গর্তের গভীরতা, সরু পাইপ এবং নরম মাটি হওয়ায় তারা ব্যর্থ হন। পরে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে আধুনিক সরঞ্জাম দিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
তদন্তে জানা গেছে, গত বছর এলাকার এক ব্যক্তি এখানে একটি গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। প্রায় ১২০ ফুট খনন করেও পানি না পেয়ে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর পাইপ ও গর্ত খোলা রেখেই স্থানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। দীর্ঘ সময় অবহেলায় পড়ে থাকার কারণে গর্তটি আরও প্রশস্ত হয়ে যায়। আশপাশে কোনো সতর্কতামূলক নির্দেশনা বা সুরক্ষা ব্যারিকেড না থাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটার সুযোগ তৈরি হয়—এ অভিযোগ স্থানীয়দের।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বলেন, গর্তটি সরু হওয়ায় সরাসরি নিচে নামা সম্ভব হয়নি। তাই পাশের দিক থেকে বিকল্প পথ তৈরি করে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শিশুটিকে বের করতে হয়েছে। দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টার পর সাজিদকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, অরক্ষিত নলকূপের মতো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো নিয়মিত নজরদারির আওতায় না আনা হলে ভবিষ্যতে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।