ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট:
রাজধানীতে আলোচিত রাজনৈতিক কর্মী শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় নতুন করে একজন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আলোচনা তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন অনুসন্ধানী সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, হামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন এমন একজন ব্যক্তি আগে হাদির সঙ্গে একাধিক কর্মসূচিতে ঘনিষ্ঠভাবে উপস্থিত ছিলেন।
ঘটনার পর কয়েকটি ছবি গণমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। ছবিগুলোতে দেখা যায়, রাজধানীর ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে শরিফ ওসমান হাদির পাশেই বসে আছেন আলোচিত ওই ব্যক্তি। বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, চলতি মাসের ৯ তারিখে ওই অনুষ্ঠানে তারা একসঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এবং একই সময় সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে প্রবেশ করেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একাধিক পোস্টে দাবি করেন, আলোচিত ব্যক্তির নাম ফয়সাল করিম মাসুদ। তার পোস্ট অনুযায়ী, তিনি অতীতে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। একই সঙ্গে তিনি আদাবর থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে এসব তথ্য এখনো পর্যন্ত কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়নি।
সায়েরের আরেকটি পোস্টে আরও দাবি করা হয়, ২০২৪ সালের ৮ নভেম্বর রাজধানীর আদাবর এলাকায় একটি স্কুলে ঢুকে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় ফয়সাল করিম মাসুদ গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তার কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছিল বলে পোস্টে উল্লেখ করা হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান বলে দাবি করা হলেও, কীভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায় জামিন দেওয়া হয়—তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে।
এদিকে, শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুর আনুমানিক ২টা ২৫ মিনিটে রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। পুলিশের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, মোটরসাইকেলে আসা একাধিক ব্যক্তি হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। হামলাকারীরা তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল বলেও জানানো হয়।
গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাদিকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকদের বরাতে জানা গেছে, গুলি মাথার পাশ দিয়ে প্রবেশ করে বেরিয়ে যাওয়ায় তার মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও শরিফ ওসমান হাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি দাবি করেন, বিদেশি নম্বর থেকে একাধিক হুমকির কল পাচ্ছিলেন এবং তার পরিবারকেও টার্গেট করা হচ্ছে। সে সময় তিনি এসব হুমকির মাঝেও নিজের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
গুলিবর্ষণের ঘটনার পর বিভিন্ন মহল দ্রুত সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনার সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।