
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট:
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে রোগী দেখার সময় মোবাইল ফোনে গেম খেলার অভিযোগে এক চিকিৎসককে কেন্দ্র করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও ঘিরে এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়, যা পরে প্রশাসনিক পর্যায় পর্যন্ত গড়ায়।
ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর। ওইদিন কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডা. শামরিন সুলতানাকে দায়িত্ব পালনকালে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেখা যায়—এমন দৃশ্য একটি ভিডিওতে ধারণ করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক হাতে রোগীর প্রেসক্রিপশন লিখছেন এবং একই সময়ে অন্য হাতে মোবাইল ফোনে গেম খেলছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই তা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা বিষয়টিকে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার সময় রোগীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত—এমন মন্তব্য করেন অনেকে।
ভিডিওটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি নজরে আসে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে রোববার, ১৪ ডিসেম্বর সকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এ অভিযান চলে।
কুষ্টিয়া জেলা সমন্বিত দুদক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায়ের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল হাসপাতালের বিভিন্ন দপ্তরের নথিপত্র পর্যালোচনা করে। এ সময় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের উপস্থিতি রেজিস্টার, ছুটির কাগজপত্র এবং দায়িত্ব পালনের সময়সূচি যাচাই করা হয়।
দুদকের প্রাথমিক যাচাইয়ে চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলা, নিয়মিত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে ছুটি ভোগ করার অভিযোগের কিছু প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়। এছাড়াও বহির্বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যান্য চিকিৎসকদের নথিপত্র পর্যালোচনায়ও কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
অভিযান শেষে সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় জানান, সংগৃহীত সব নথিপত্র বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে। যাচাই শেষে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ঘটনাটি হাসপাতাল প্রশাসনের মধ্যেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রোগীদের সঠিক ও সময়োপযোগী সেবা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি—এমন মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক তদন্তের পাশাপাশি জনস্বার্থে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে।