ক্রাইম এডিশন প্রতিবেদক।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালপুরে একটি মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি উঠেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জইশ-ই-মোহাম্মদ (জেইএম) প্রধান মাওলানা মাসুদ আজহারের পরিবারের একাধিক সদস্য ও সংগঠনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতা-কর্মী। যদিও পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্ফোরণের কারণ বা নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করেনি, তবে একটি অনানুষ্ঠানিক সূত্র দাবি করেছে, এ হামলা ছিল ‘টার্গেটেড’ এবং এর লক্ষ্যবস্তু ছিল জেইএম-এর অভ্যন্তরীণ একটি গোষ্ঠী।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুরের নামাজ চলাকালে মসজিদের ভেতরে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো এলাকা। মসজিদের একাংশ ধসে পড়ে এবং আহতদের মধ্যে অনেকেই গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। তাদের বাহাওয়ালপুর ও লাহোরের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
জইশ-ই-মোহাম্মদ সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই বিস্ফোরণে তাঁদের নেতার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা এটিকে “শত্রুদের ষড়যন্ত্র” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে বিস্ফোরণের প্রকৃতি—বোমা হামলা, আত্মঘাতী আক্রমণ না গ্যাস লিক—সে সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু জানায়নি সংগঠনটি।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ঘটনাটির সত্যতা যাচাই ও সম্ভাব্য জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দল গঠন করার উদ্যোগ চলছে। এর মধ্যে জাতিসংঘ, ইন্টারপোল ও দক্ষিণ এশিয়ার কিছু বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থাও সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মাসুদ আজহার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন সন্ত্রাসী। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সিআরপিএফ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় তার সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের নাম উঠে আসে। ওই ঘটনার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক চরম উত্তেজনায় পৌঁছায় এবং জাতিসংঘে ভারতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাসুদ আজহারকে সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।
তবে বিগত কয়েক বছর ধরে তিনি গোপন অবস্থানে রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কেউ কেউ দাবি করেন, তিনি বাহাওয়ালপুরেই ছিলেন—যেখানে এই বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। যদিও পাকিস্তান সরকার কখনোই তার অবস্থান স্বীকার করেনি বা তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিস্ফোরণ যদি সত্যিই মাসুদ আজহারের পরিবারের উপর হামলা হয়ে থাকে, তবে তা পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলোর ভেতরে বিদ্যমান বিভাজনেরই প্রতিফলন হতে পারে। এমনও হতে পারে, এটি কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীর প্রতিশোধমূলক হামলা অথবা আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার কোনো গোপন অভিযানের অংশ।
বাহাওয়ালপুরের স্থানীয় প্রশাসন আপাতত ঘটনাটিকে “সন্দেহজনক বিস্ফোরণ” হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনী পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। এখনো পর্যন্ত কোনো গোষ্ঠী এই বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে বলে মত দিয়েছেন দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক একাধিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক। তারা মনে করছেন, এ ধরনের ঘটনা শুধু অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ।
Leave a Reply