সোহেল রানা মাসুদ “ক্রাইম এডিশন” প্রকাশ: ৮ মে ২০২৫
দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের দেওয়া বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার মেয়াদ আরও একবার ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন পদমর্যাদার কর্মকর্তা এবং তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিশেষ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। একইসঙ্গে কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর প্রেষণে কর্মরত সেনা কর্মকর্তারাও এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
নতুন এই মেয়াদ ১৪ মে ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে এবং এটি ৬০ দিন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই বিশেষ দায়িত্ব পালনকালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারাসমূহ— যেমন ৬৪, ৬৫, ৮৩, ১০৭, ১৩০ ইত্যাদি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন। এসব ধারা মূলত সম্ভাব্য অপরাধ প্রতিরোধ, জনশৃঙ্খলা রক্ষা, দাঙ্গা বা সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দেয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক গণআন্দোলন ও সংঘাতের ঘটনায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে প্রথমবার সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এরপর থেকে একাধিক ধাপে এই ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সরকার মনে করছে, এই পদক্ষেপের ফলে মাঠপর্যায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যকর আইন প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কিছু এলাকায় নিরাপত্তা হুমকির ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে সেনা কর্মকর্তাদের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বলবৎ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যাতে প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
তবে এই পদক্ষেপ নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে ভিন্নমতও রয়েছে। একাধিক মানবাধিকার সংগঠন মনে করে, সামরিক কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান একটি অসামরিক ব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদে হুমকিস্বরূপ হতে পারে। তাঁরা বলছেন, এটি প্রশাসনিক ভারসাম্য ও স্বচ্ছতা ক্ষুণ্ণ করতে পারে এবং অসামরিক প্রশাসনের ভূমিকাকে দুর্বল করে।
এদিকে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত হস্তক্ষেপ একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য সহায়ক হতে পারে, তবে এটি যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার না হয়, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।
মাঠপর্যায়ের একাধিক জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কর্মকর্তারাও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার নির্দেশনা পেয়েছেন। ইতোমধ্যে সেনা কর্মকর্তারা বিভিন্ন জেলায় দায়িত্ব গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই প্রেক্ষাপটে প্রশাসন, সেনাবাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশব্যাপী শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জনস্বার্থে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করাই এখন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।