সোহেল রানা মাসুদ। ক্রাইম এডিশন।
রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমধর্মী ও সামাজিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিয়ের অনুষ্ঠান। এখানে ২০টি নবদম্পতির বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে সম্পূর্ণ যৌতুকবিহীনভাবে, যা বর্তমান সমাজে একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বুধবার (৭ মে) বিকেলে গঙ্গাচড়া সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এই মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গঙ্গাচড়া উপজেলা শাখা। আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করে স্থানীয় মানবিক সংগঠন ‘গঙ্গাচড়া মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন’। বিয়ের অনুষ্ঠানটি ছিল এক উৎসবমুখর পরিবেশে পরিপূর্ণ, যেখানে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও শত শত মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে গঙ্গাচড়ার মানুষ আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছিল। নবদম্পতিদের সম্মানে আয়োজন করা হয় কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া মাহফিল এবং ইসলামি সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নবদম্পতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রয়োজনীয় উপহারসামগ্রী। উপহার তালিকায় ছিল স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থ, খাট, তোশক, বালিশ, কম্বল, আলমারি, রান্নার চুলা, হাঁড়ি-পাতিলসহ যাবতীয় গৃহস্থালি সামগ্রী, যাতে তারা নতুন সংসার শুরু করতে পারেন কোন রকম আর্থিক চাপ ছাড়াই।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বিয়ের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে বিরাজমান যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যৌতুকমুক্ত বিয়ের সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়া। যৌতুকের কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশে বহু মেয়ে নির্যাতনের শিকার হন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রাণও হারান। এই প্রথা বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার অংশ হিসেবেই এই আয়োজন।
গঙ্গাচড়া জামায়াতের নেতৃবৃন্দ বলেন, “আমরা চাই এমন একটি সমাজ গড়তে, যেখানে বিবাহ শুধুই একটি সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধন, সেখানে কোনো আর্থিক লেনদেন কিংবা চাপ থাকবে না। যৌতুকমুক্ত বিয়েই একটি সুন্দর দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি হতে পারে।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের বক্তব্যে এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, এই ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ শুধু গঙ্গাচড়ায় নয়, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়া উচিত। তারা ভবিষ্যতে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেও এমন যৌতুকবিহীন বিয়ের আয়োজনকে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান।
নবদম্পতিরা জানান, এমন আয়োজনে তারা গর্বিত ও আনন্দিত। এক নববধূ বলেন, “আমার বাবার সামর্থ্য সীমিত। যৌতুক না নেওয়ায় তিনি অনেকটা চাপমুক্ত। আমি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে করেন অনেকেই। যৌতুক একটি সামাজিক ব্যাধি, যা পরিবার ও সমাজকে দুর্বল করে তোলে। যৌতুক ছাড়াই বিয়ের এই আয়োজন সমাজের প্রতি একটি ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
Leave a Reply