ক্রাইম এডিশন ডেস্ক।
সাম্প্রতিক এক ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। হাইকোর্টের একটি রায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তাঁর একটি মন্তব্যের জেরে সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী তাঁর বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন।
জানা গেছে, শনিবার (২৪ মে ২০২৫) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান সারজিস আলমের নামে। এতে বলা হয়েছে, সারজিস আলমের মন্তব্য বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি তৈরি করেছে এবং এটি আদালত অবমাননার শামিল হতে পারে।
এর পটভূমিতে রয়েছে ২২ এপ্রিল হাইকোর্টের দেওয়া একটি রায়। ওইদিন আদালত বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে শপথ গ্রহণে কোনো বাধা নেই বলে রায় দেন। এই রায় ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। এরই অংশ হিসেবে সারজিস আলম একটি পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘মব তৈরি করে যদি হাইকোর্টের রায় নেওয়া যায় তাহলে এই হাইকোর্টের দরকার কী?’ — যা অনেকের কাছেই আদালত অবমাননামূলক বলে বিবেচিত হয়েছে।
আইনজীবী মো. জসিম উদ্দিন তাঁর পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে সারজিস আলমকে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়ার পাশাপাশি দুঃখ প্রকাশ এবং সংশ্লিষ্ট পোস্ট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায়, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়ে এই ঘটনার গুরুত্ব বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে বলে বহু বিশ্লেষকের মত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও, তা যেন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও বিচার ব্যবস্থার উপর আঘাত না করে — এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, সারজিস আলম এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে রাজনৈতিক অঙ্গনে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, এটা একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা হতে পারে তাকে বিব্রত করতে। অন্যদিকে, অনেকে মনে করেন, দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিদের আরও সচেতন হওয়া উচিত সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত বক্তব্য নিয়ে।
বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বারবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তবে বিচার বিভাগের সুনাম এবং আস্থা রক্ষার ক্ষেত্রে এ ধরনের আইনি পদক্ষেপকে অনেকে ইতিবাচক হিসেবেও দেখছেন।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের আইনজ্ঞ ও সমাজ বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে তারা মনে করছেন, ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষকে সম্মানজনক ও নিয়মতান্ত্রিক ভাষা ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
Leave a Reply