ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
বগুড়া জেলা পুলিশ ভবন সংলগ্ন পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ অডিটরিয়ামে জেলা পুলিশ, বগুড়ার মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সুপার মোঃ জেদান আল মুসা, পিপিএম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় জেলার সকল থানা ও বিভাগের অফিসার-ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ সুপারের উদ্বোধনী বক্তব্য
সভা শুরুতে জেলা পুলিশের প্রধান, জনাব মোঃ জেদান আল মুসা পিপিএম, পুলিশ সুপার বগুড়া, মাসিক কর্মপরিকল্পনা এবং কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, “মাসিক কল্যাণ সভা শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটা আমাদের অভিযাত্ৰা, ভাবনা ও সমস্যাকে একত্রিত করে সমাধানের পথ সুগম করে। এই সভার মাধ্যমে প্রত্যেক পুলিশ সদস্য যেন নিজের চ্যালেঞ্জগুলি উপস্থাপন করতে পারে।” তিনি দায়িত্বশীল পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মাদক, সহিংসতা প্রতিরোধ, সড়ক নিরাপত্তা, নারী ও শিশু সুরক্ষা, সহ করুণাময় পরিস্থিতির পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন।
অতিরিক্ত এসপি’র পরিচালনায় তৈরি ছিল কার্যকরী অজেণ্ডা
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) জনাব হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান সভাটি সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে পরিচালনা করেন। তিনি প্রতিটি টপিকেই স্পষ্ট নির্দেশনা নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারে। সভার এজেণ্ডা ছিল—সদ্য কার্যকর করা পুলিশ মেন্ডেট, নতুন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, ইনসেন্টিভ প্রকল্প ও স্বাস্থ্য‑সুরক্ষাবিষয়ক পদক্ষেপ। এছাড়াও থানাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়।
মতামত ও উদ্বেগ শোনার জন্য ছিল পর্যাপ্ত সুযোগ
সভায় থানাগুলোর ওয়ারিশরা, বিভাগীয় অধিকারীরা, সিভিল স্টাফদের পাশাপাশি অন্যান্য স্তরের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যেক স্তরের প্রতিনিধি তাঁদের সংশ্লিষ্ট থানার পরিস্থিতি, অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ ও উন্নয়ন‑সংক্রান্ত সুপারিশ তুলে ধরেন। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল
কর্মক্ষমতা উন্নয়নে আধুনিক ও সেবাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োগে গুরুত্ব
সুযোগ-সুবিধার উন্নয়নের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর মনোবল স্ফুলিঙ্গিত করা
জরুরি স্বাস্থ্য-সুরক্ষা পরিকল্পনা: ফার্স্ট-এইড, সেফটি-কিট, মহামারিকালীন প্রস্তুতি
থানাসমূহে পাবলিক রিলেশন ব্যবস্থার সংস্কার
পুলিশ সুপার মোঃ জেদান আল মুসা সক্রিয়ভাবে এসব মতামত শোনেন এবং প্রত্যেক অনুরোধ ও প্রতিকারযোগ্য সমস্যার ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় নেতৃত্বদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “নাগরিককেন্দ্রিক পুলিশিং বাস্তবায়ন করলে জনসাধারণের আস্থা, ভরসা ও পুলিশির আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। সে জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ কল্যাণ ও বাহ্যিক কর্মকৌশলের পারস্পরিক সমন্বয় অত্যন্ত জরুরী।”
সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনামূলক রূপরেখা
সভায় আলোচ্য বিষয়গুলো নিয়ে নিম্নলিখিত নির্দেশনাসমূহ অনুমোদিত হলো:
1. অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ স্লট চালু – পুলিশের নৈমিত্তিক কাজের সাথে ‘মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা’ এবং ‘আইনবদ্ধতা রক্ষা’ প্রশিক্ষণ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
2. থানাগুলোর ইন্সেন্টিভ প্রকল্প – সেবা চমৎকারের ক্ষেত্রে মাসিক ও ত্রৈমাসিক পুরস্কার প্রদান।
3. মাসিক কল্যাণ তহবিল – দুর্ঘটনায় জড়িত সদস্যদের আর্থিক সহায়তা ও পরিবার-পরিপালনে বিশেষ ফান্ড গঠন।
4. সিভিল স্টাফ ও কনস্টেবুলদের জন্য হেলথ স্ক্রিনিং – ধূমপান বিরোধী ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণমূলক ক্যাম্পস্।
5. আগামী মাসে থানা মেলার পরিকল্পনা – জনসংযোগ বাড়াতে ও সাধারন নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন ও অভিযোগ গ্রহণ সহজ করতে হবে।
সম্মিলিত দায়িত্ব ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি
পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা বলেন, “এই ধরনের সভার লক্ষ্য শুধু কথা বলা নয়; বরং সেগুলো বাস্তবায়ন, মণ্থন ও ফলাফল গ্রহণের জন্য সময়নির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।” এই নির্দেশনা সর্বত্র দ্রুতভাবে কার্যকর করে পরবর্তীতে পর্যালোচনার মাধ্যমে সংশোধন করা হবে বলে সভায় আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।
সভার গুরুত্ব ও প্রত্যাশা
দলগত মনোবল উন্নয়ন: সভায় আবেগশীল প্রশংসা, উদ্বেগ ও সুপারিশ গ্রহন করা হয়, যা সদস্যদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রস্তুতি: করোনার পর থেকেই স্বাস্থ্যে সচেতনতা অনেকাংশে বেড়েছে; তবে কল্যাণ সভায় এটার গুরুত্ব আবারও প্রমাণিত হলো।
উন্নত জনসংযোগ: পুলিশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে জনতার সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন কর্মসূচি গুরুত্ব লাভ করলো।
স্বচ্ছতা ও ফলাফলের নিশ্চয়তা: সভার নির্দিষ্ট এজেণ্ডাগুলোতে কর্মপরিকল্পনা ও তদারকি ব্যবস্থা কার্যকরীভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে—এতে সাধারণের বিশ্বাস আরও বৃদ্ধি পাবে।
বগুড়ার এই মাসিক কল্যাণ সভা পুলিশ বাহিনীর ভেতরের আলোচনা দেখায়, তারা ব্যক্তিমানুষের কল্যাণ, স্বাস্থ্য ও মনোবল বৃদ্ধিতে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক সভা নয়—বরং একটি কার্যকর যৌথ প্ল্যাটফর্ম যাতে সকল স্তরের পুলিশ সদস্য অংশ নিয়ে নিজেদের সমস্যা অনায়াসে উপস্থাপন এবং সমাধান পাবে। আলোচ্য এজেণ্ডা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বগুড়া পুলিশ তাদের সার্বিক সক্ষমতা ও কর্মদক্ষতা আরও দৃঢ়ացত করবে—এটা আইন শৃঙ্খলা, নাগরিক সেবা এবং কুশলতা ত্রিমাস্ পর্যায়ক্রম অনুযায়ী প্রগতিশীল করবে।
Leave a Reply