ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নিবন্ধনের জন্য আজ নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করতে যাচ্ছে ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’ বা এনসিপি। দলটির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, রোববার (২২ জুন ২০২৫) আবেদনপত্র ইসিতে জমা দেওয়া হবে। নতুন দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করলেও শেষ পর্যন্ত আজই তাদের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ করতেই সময় লেগেছে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক কাঠামো, কার্যকর অফিস স্থাপন এবং সদস্য ফরমসহ প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুতের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করেই তারা আজ ইসিতে যাচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “আমরা প্রতিটি জেলার কমিটি গঠন করেছি, উপজেলা পর্যন্ত সংগঠন বিস্তৃত করেছি। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুসারে অফিস স্থাপন করেছি, এমনকি অফিসের জন্য এক বছরের মেয়াদে চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। এই সমস্ত প্রস্তুতির পর আজ নিবন্ধনের জন্য আবেদন করছি।”
তিনি আরও জানান, দলের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে ৫ থেকে ৬টি বিকল্প নির্বাচন করা হয়েছে। তবে কোন প্রতীক গ্রহণ করা হবে, তা চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে আবেদন জমা দেওয়ার পর এবং কমিশনের অনুমোদনের পর গণমাধ্যমে জানানো হবে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আমাদের ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রতীকের পরামর্শ পেয়েছি। কলম, বই, কাগজের নৌকা ইত্যাদি প্রতীকের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখা গেছে। এসব থেকে নির্বাচন কমিশনের শর্ত মেনে আমরা সেরা প্রতীকটি বেছে নিতে যাচ্ছি।”
দলটির স্থায়ী অফিসের বিষয়েও বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। জানা যায়, রাজধানীর রূপায়ন টাওয়ারের একটি ফ্লোর তারা এক বছরের চুক্তির ভিত্তিতে এনসিপির অফিস হিসেবে নির্ধারণ করেছে। এ বিষয়ে দলটির নেতারা জানান, ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে অফিস সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের ২৮ মে জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। মূলত ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা কিছু ছাত্রনেতা এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা মিলে এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন, তবে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধনের আবেদন এতদিন দেওয়া হয়নি।
নিবন্ধনের জন্য গঠনতন্ত্র, সাধারণ সভা ও জাতীয় কাউন্সিল গঠনের কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। খসড়া গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির কাঠামো, জেলা ও থানা পর্যায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ, জাতীয় কাউন্সিলের নিয়মাবলি, সদস্যপদ গ্রহণ ও নবনির্বাচিত সভাপতির অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নেবেন:
এনসিপির কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ
প্রতিটি জেলা ও সমমর্যাদার ইউনিট থেকে ৫ জন প্রতিনিধি
প্রতিটি থানা থেকে ২ জন প্রতিনিধি
এই প্রতিনিধিরাই ভোটের মাধ্যমে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করবেন। এতে এনসিপির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মজবুত হবে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এই মুহূর্তে দলের নিবন্ধন পেলে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি অংশ নিতে পারবে। তবে নিবন্ধন না পেলে দলটি অনিবন্ধিত অবস্থায় জোট গঠন অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।
এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়া ও সংগঠন নির্মাণে দলটির সময়ক্ষেপণকে কেউ কেউ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের মতে, তাড়াহুড়া না করে নিয়ম মেনে সংগঠন বিস্তার করাটা রাজনৈতিকভাবে একটি পরিপক্বতার পরিচয়। এখন দেখা যাক, নির্বাচন কমিশন দলটির আবেদন বিবেচনা করে কী সিদ্ধান্ত নেয়।
Leave a Reply