সোহেল রানা মাসুদ। অনলাইন ডেস্ক। ক্রাইম এডিশন।
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ১৩টি বিদ্যালয় থেকে কেউ পাস করতে পারেনি—এটি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে এক দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক চিত্র। এই ১৩টি বিদ্যালয়ের মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৮ জন, কিন্তু একজনও উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
বোর্ড কর্তৃপক্ষের তথ্য
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফলাফলের পর, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মীর সাজ্জাদ আলী এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানান। তার প্রতিবেদনে বলা হয়, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এসব শিক্ষার্থী কোনোভাবে পাশ করতে পারেনি, যা সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
শূন্য পাসের বিদ্যালয়গুলোর তালিকা
শূন্য পাস পাওয়া বিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন জেলার অন্তর্গত হলেও, তারা সবাই দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত। এ বিদ্যালয়গুলো হলো:
১. রতনপুর উচ্চ বিদ্যালয় (পীরগাছা, রংপুর)
২. ছোট উজিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (পীরগঞ্জ, রংপুর)
৩. গরিদাহা উচ্চ বিদ্যালয় (সাঘাটা, গাইবান্ধা)
৪. বিশ্বনাথপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (গোবিন্দগঞ্জ, গাইবান্ধা)
৫. শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (ডিমলা, নীলফামারী)
৬. পূর্ব কুমারপুর উচ্চ বিদ্যালয় (কুড়িগ্রাম সদর)
৭. পায়রাডাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় (নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম)
৮. নাজির মামুদ উচ্চ বিদ্যালয় (ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম)
৯. পশ্চিম বড়ুয়া রোটারী উচ্চ বিদ্যালয় (লালমনিরহাট সদর)
১০. সাত কামার উচ্চ বিদ্যালয় (বীরগঞ্জ, দিনাজপুর)
১১. সানুয়া উচ্চ বিদ্যালয় (ঠাকুরগাঁও সদর)
১২. জগন্নাথপুর উচ্চ বিদ্যালয় (ঠাকুরগাঁও)
১৩. ডাবর ভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় (বোদা, পঞ্চগড়)
সার্বিক ফলাফল
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড থেকে এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১,৮২,৪১০ জন। তাদের মধ্যে ১,২২,১৪৬ জন পাস করেছেন এবং ৬০,৮৮০ জন অকৃতকার্য হয়েছেন। বোর্ডের গড় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৬৭.০৩ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এ হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে; ২০২৪ সালে পাশের হার ছিল ৭৮.৪৩ শতাংশ।
জিপিএ-৫ প্রাপ্তির হারও কমেছে
২০২৫ সালে বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫,০৬২ জন, যা গত বছরের ১৮,১০৫ জনের তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কম। এটি বোর্ডের মেধাগত অবস্থানেও নেতিবাচক ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্লেষণ ও করণীয়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনাজপুর বোর্ডের অধীন এসব বিদ্যালয়ে ফলাফলের এমন ভয়াবহ অবনতি শিক্ষক স্বল্পতা, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ঘাটতি, শিক্ষার মান নিয়ে নজরদারি না থাকা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও বোর্ড কর্তৃপক্ষকে এখনই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের মনোভাব উন্নয়ন, এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত জরুরি।
Leave a Reply