আব্দুস সোবহান মোল্লা, গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করার ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা জানান, প্রায় প্রতিদিনই এখানে খুন, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মতো অপরাধ ঘটছে, যা জনজীবনে ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছে।
প্রতিদিনের মতো হত্যাকাণ্ড
গত সাত মাসে গাজীপুরে অন্তত ১০৪টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে মহানগরে ৪৩টি এবং জেলার পাঁচটি থানায় ৬১টি ঘটনা। অর্থাৎ গড়ে এক দিন অন্তর একটি করে হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। বেশিরভাগ মামলার রহস্য উদ্ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তার হলেও, প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের অভাব অপরাধ প্রবণতা বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
পুলিশের স্বল্পতা ও কর্মসংস্থানের সংকট
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম খান বলেন, পুলিশ সদস্যের ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া গত বছরের ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ায় কর্মসংস্থান কমেছে, যা অপরাধ বৃদ্ধি করেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
নানা কারণে সহিংসতা
জমি বিরোধ, পারিবারিক কলহ, পরকীয়া, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য গাজীপুরে হত্যাকাণ্ড বাড়ছে। ভাসমান জনসংখ্যা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কম উপস্থিতি অপরাধীদের সুযোগ দেয়। ঘন বন-জঙ্গলও তাদের লুকিয়ে থাকার স্থান হিসেবে কাজ করছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর আগে সাহাপাড়া এলাকায় সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, চাঁদাবাজি ও অপরাধ চক্রের কারণে এসব হামলা।
ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা বাড়ছে
টঙ্গীসহ মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ঘটনা বেড়েছে। কলেজ ছাত্র মাহফুজুর রহমান ও রঞ্জু নামের দুই যুবক ছিনতাইকারীর হাতে নিহত হয়েছেন। কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় বৃদ্ধ নাসির পালোয়ানের মৃত্যু স্থানীয়দের আতঙ্ক বাড়িয়েছে।
পিটুনিতে হত্যাকাণ্ড
কাপাসিয়া ও কোনাবাড়িতে চোর সন্দেহে বা বিরোধের জেরে কয়েকজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবি
স্থানীয়রা বলছেন, কেবল অপরাধীদের গ্রেপ্তার করলেই হবে না; তাদের পেছনে থাকা মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থদাতাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। মূল হোতাদের ধরতে না পারলে অপরাধের শিকড় গভীরে প্রবেশ করবে এবং নতুন অপরাধী গড়ে উঠবে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থাকেও আরও সক্রিয় হতে হবে।
উপসংহার
গাজীপুরে অপরাধ দমনে গ্রেপ্তার অভিযান ছাড়াও মূল হোতাদের বিচারের আওতায় আনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, পুলিশের সক্ষমতা উন্নয়ন এবং কঠোর আইনের প্রয়োগ জরুরি। অন্যথায়, দীর্ঘদিন ধরে অপরাধের ছায়ায় থাকার ভয় গাজীপুরবাসী এড়াতে পারবে না।
Leave a Reply