ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
যশোর জেলার সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে ১২ কেজি মাদকদ্রব্য গাঁজাসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫) রাতে শার্শা থানার পুলিশ একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এ সাফল্য অর্জন করে।
থানার দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, শার্শা থানার এসআই (নিঃ) হযরত আলী এবং এএসআই (নিঃ) মোঃ সিলন আলীর নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্সের একটি টিম উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় মোঃ জুলফিকার আলী ভুট্টো নামের এক ব্যক্তির বসতবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশিকালে তার ঘর থেকে ১২ কেজি অবৈধ মাদকদ্রব্য গাঁজা উদ্ধার করা হয় এবং তাকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত জুলফিকার আলী ভুট্টোর বয়স ৩৫ বছর। তিনি রামচন্দ্রপুর গ্রামের পূর্বপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তার বাবার নাম মোঃ কওছার মোড়ল এবং মায়ের নাম মোছাঃ আছিয়া বেগম। পুলিশ বলছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন ছিল। তবে এবার পুলিশের বিশেষ নজরদারির কারণে অবশেষে তার আস্তানায় অভিযান চালানো হয়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শার্শা থানার ওসি বলেন, “মাদক একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। আমরা শার্শা থানা এলাকায় মাদক নির্মূলে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। এরই ধারাবাহিকতায় এই বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে এবং তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে আরও জানা যায়, গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে শার্শা থানায় মামলা নং-১০, তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিঃ রুজু করা হয়েছে। মামলা দায়ের করা হয়েছে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) সারণির ১৯(খ) ধারায়। এর অধীনে দোষী সাব্যস্ত হলে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড এবং আর্থিক জরিমানা হতে পারে।
অভিযান সম্পর্কে স্থানীয়রা জানান, রামচন্দ্রপুর গ্রামে কিছুদিন ধরেই মাদক কারবারিদের আস্তানা গড়ে উঠেছিল। এ নিয়ে গ্রামবাসী উদ্বিগ্ন ছিল। তবে পুলিশের এই সাফল্যময় অভিযানে তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমাদের এলাকার যুব সমাজ মাদকের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। আমরা পুলিশের কাছে বারবার অভিযোগ দিয়েছি। অবশেষে আজকে পুলিশের সফল অভিযানে একজনকে আটক করা হয়েছে, এতে আমরা খুশি।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, মাদকের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যাহত থাকবে। তারা আরও বলেন, “যে কোনো মূল্যে মাদক ব্যবসায়ী ও চক্রকে আইনের আওতায় আনা হবে। সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ জনগণেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।”
এদিকে মাদকবিরোধী বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশে সীমান্তবর্তী এলাকায় গাঁজা ও ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকের প্রবাহ বেশি। বিশেষত যশোর, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া প্রভৃতি সীমান্তবর্তী জেলাগুলো দিয়ে মাদক পাচারের প্রবণতা তুলনামূলকভাবে বেশি। এইসব এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির নিয়মিত অভিযানের ফলে অনেক মাদক ব্যবসায়ী ধরা পড়লেও নতুন করে আবারও এ চক্র গড়ে ওঠে।
তারা বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ নয়, পাশাপাশি মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা গড়ে তুলতে পারলেই এ ভয়াবহ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, শার্শা উপজেলা যশোর জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় মাদক পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিনিয়তই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবারের এ অভিযানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীর বিষয়ে পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তার সঙ্গে আরও কোনো চক্র জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সবশেষে পুলিশ জানায়, এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। তারা সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানান, এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া গেলে যেন দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়।
Leave a Reply