
ক্রাইম এডিশন, অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর শ্রেণিকক্ষগুলোর নাজুক অবস্থা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। তিনি জানিয়েছেন, বুয়েটের অনেক ক্লাসরুমে এখনো পর্যাপ্ত ফ্যান নেই, আর এসি থাকা তো দূরের কথা। এমনকি অনেক কক্ষের বেঞ্চও বসার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) এয়ার কন্ডিশনার (এসি) স্থাপন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলমান আলোচনার প্রেক্ষিতে বুধবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ফাইয়াজ বুয়েটের বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
তিনি লিখেছেন, “ডাকসুতে এসি লাগানো নিয়ে অনেক আলোচনা দেখলাম। ভাবলাম দেখি, ঢাবির ক্লাসরুমে কি এসি নাই এমন কেউ বলে কিনা। কিন্তু কোথাও দেখিনি। মনে হলো, তাদের সব ক্লাসেই হয়তো এসি আছে, তাই অন্যত্র নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে।”
ফাইয়াজ বলেন, “ফেসবুকে দেখলেই বোঝা যায়, সবাই ভাবে সরকার নাকি বুয়েটের পেছনে সবচেয়ে বেশি খরচ করে। অথচ বাস্তবে আমাদের কোনো বিভাগেই একটি ক্লাসরুমেও এসি নেই। স্যারদের কাছে গেলে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ নেই, ব্যালেন্স নাকি মাইনাসে।”
তার ভাষায়, “এসি তো অনেক দূরের কথা, বুয়েটের ক্লাসরুমগুলোতে যথেষ্ট ফ্যানও নেই। গরমের সময় রুমের ভেতরে ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রার মতো মনে হয়। বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা এতটাই খারাপ যে মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার নিজের চোখে দেখেছি, ক্লাসে একাধিক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এমনকি শিক্ষকরা অনেকে গরমের কারণে ক্লাসে আসতেও চান না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মেকানিকাল ভবনের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা এত খারাপ যে সেখানে ক্লাস করা কষ্টকর। বেঞ্চগুলোও পাকিস্তান আমলের, বেশিরভাগই বসার অযোগ্য।”
শুধু ক্লাসরুম নয়, বুয়েটের আবাসিক হলগুলোর অবস্থাও শিক্ষার্থীদের জন্য বড় কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান আবরার ফাইয়াজ। তিনি বলেন, “বুয়েট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও, শেষ ২৪ ব্যাচকে ভর্তি হওয়ার সময় ২৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে শুধুমাত্র হলের জন্য। এরপর প্রতি বছর ওই অর্থের পাশাপাশি প্রতি মাসে বাধ্যতামূলকভাবে ২,৪০০ টাকা দিতে হয় ডাইনিং চার্জ হিসেবে। অর্থাৎ হলে থাকা একজন শিক্ষার্থীকে বছরে অন্তত ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়।”
ফাইয়াজ আরও জানান, “আমার হলে দুইজনের জন্য নির্ধারিত কক্ষে ৫-৬ জন পর্যন্ত থাকতে হয়। অন্য হলে ৮-৯ জন পর্যন্তও থাকে। গত বছর কিছুটা উন্নতি হলেও বাস্তবতা এখনো ভয়াবহ।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এত টাকা খরচ করেও বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমে এমন পরিবেশ পায়, এটা আসলে দুঃখজনক। সরকারের বরাদ্দ কোথায় যায়, সেই প্রশ্ন তোলা এখন বৃথা।”
তার মতে, “আমার কুষ্টিয়া জেলা স্কুলের ক্লাসরুমও বুয়েটের ক্লাসরুমের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে। দেশের অন্য জায়গার পরিস্থিতি আরও করুণ, তাই হয়তো এসব নিয়ে কেউ কথা বলে না।”
আবরার ফাইয়াজের এই পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন—যে দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সরকারের উচিত বুয়েটসহ দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া। বিশেষ করে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাব, হল ও ডাইনিং সুবিধার মানোন্নয়নকে এখন সময়ের দাবি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষক ও অভিভাবকরাও বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ধরে রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের জন্য ন্যূনতম আরামদায়ক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ, গরমে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া ক্লাসরুমে জ্ঞানার্জন নয়, বরং হতাশা জন্ম নেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবরার ফাইয়াজের এই বক্তব্য ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ শেয়ার করেছেন। কেউ লিখেছেন, “এটাই বাস্তব চিত্র,” কেউ বলেছেন, “দেশের উচ্চশিক্ষায় সংস্কার না এলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ঝুঁকির মুখে পড়বে।”