
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
বরিশালে শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে শহরের টাউন হল চত্ত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে প্রশাসন একনায়ক বিশেষ রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং এই অবস্থা শুধুই প্রতিহত করা যাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও সাংবিধানিক নিয়মকানুন মজবুত করে। এই দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও বরিশাল মহানগর আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মু. বাবর বলেন, “জনদাবি হিসেবে অবিলম্বে ‘জুলাই সনদ’-এর আইনগত ভিত্তি দিতে হবে। তা না হলে দেশে আবারও স্বৈরাচার ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে বিপ্লব-পরবর্তী প্রশাসন এখন কার্যকর রয়েছে, সেটির লক্ষ্য একেবারেই নিরপেক্ষ নয়। এটি একটি স্বার্থানুসারী রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হচ্ছে। এ ধরনের দলবাজ প্রশাসন যদি দ্রুত প্রতিহত না করা হয়, তাহলে সেই বিপ্লব কখনোই তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।”
বক্তব্যে অধ্যক্ষ বাবর বলেন, “‘জুলাই সনদ’ কখনোই একটি সাংকেতিক খাটো বিষয় নয়—এটি সুশাসন, মুল্যায়ন ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের জন্য একান্ত প্রয়োজন। যদি ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়ন না করা হয়, তাহলে দেশে আবারো কোনো ফ্যাসিস্ট শাসনের ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, এমন কোনো সময় আর না আসে।”
তিনি জানান, “দেশের জন্য গঠিত উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদকে তারা নিরপেক্ষ থাকলে প্রশাসনও সুষ্ঠুভাবে এবং নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, প্রশাসন রাজনৈতিক দলের অঙ্গাঙ্গি অংশ হিসেবে কাজ করছে—এটি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।”
সমাবেশে মহানগর সেক্রেটারি মাওলানা মতিউর রহমান এর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন মহানগর নায়েবে আমির অধ্যাপক মাহমুদ হোসাইন দুলাল, সহকারী সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমান, মোহাম্মদ আতিকুল্লাহ ও তারিকুল ইসলাম।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন মহানগর কর্মপরিষদ সদস্যদের পাশাপাশি মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা জয়নুল আবেদীন, আব্দুস সত্তার, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মাহফুজুর রহমান আমিন, মাওলানা শফিউল্লাহ তালুকদার, শামীম কবির, মাওলানা শহিদুল ইসলাম, কাউনিয়া থানা আমির মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, পেশাজীবী বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুলতানুল আরেফিন, উলামা বিভাগের সভাপতি মাওলানা সোহরাব হোসেন, ব্যবসায়ী বিভাগের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন হাওলাদার, ব্যাংকার্স বিভাগের সভাপতি মুজিবুর রহমান ও আইনজীবী বিভাগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের শহীদ অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন।
সমাবেশের সমাপ্তিতে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, চকবাজার ও কাটপট্টি রোডসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় টাউন হল চত্ত্বরে এসে শেষ হয়।
মিছিলের সময়ে উপস্থিত জনতা প্রতিবাদ জানায় — প্রশাসনের দলীয়করণ বরদাস্ত করা হবে না, প্রশাসনের সমস্ত স্তরে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিৎ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ প্রশাসনের জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জামায়াত নেতৃবৃন্দ বললেন, “প্রশাসন শুধুই নির্বাচিত কোনো রাজনৈতিক দলের বাহক হয়ে পড়েছে; যা বিপ্লবের মূল উদ্দেশ্য ও জনগণের নার্ভ বন্ধ করে দিচ্ছে।”
বিক্ষোভের আলোচনায় উল্লেখ ছিল এই পাঁচ দফা দাবির দিকে —
1. ‘জুলাই সনদ’-এর আইনগত ভিত্তি অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
2. প্রশাসনের দলীয়করণ রোধ করতে হবে এবং সর্বস্তরে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
3. নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করতে হবে যাতে তারা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গা থেকে মুক্তভাবে কাজ করতে পারে।
4. কমিশন ও প্রশাসনের সক্ষমতা বাড়াতে হবে যাতে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে।
5. নভেম্বর মাসে আয়োজন পরিকল্পিত গণভোটের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকল ক্ষেত্রে জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে।
এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে জামায়াতের মহানগর শাখা জানিয়েছে, তারা ভবিষ্যতেও বৃহত্তর গণমিছিল ও কর্মসূচি চালিয়ে যাবে যদি তাদের দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত না হয়।
সমাবেশ শেষে নেতারা একমত হয়েছিলেন যে, শুধু প্রতিবাদেই সীমাবদ্ধ থেকে গেলে পরিবর্তন আসবে না — তাই তাদের কর্মসূচি ধীরে ধীরে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বক্তারা জানান, “যদি ‘জুলাই সনদ’ কার্যকর না করা হয়, তাহলে পরবর্তী কোনো শাসন ব্যবস্থা আবারও একনায়কী হয়ে উঠতে পারে — যা একদিকে ৭৫’র ঘটনা থেকে শিক্ষা না নেওয়ারই প্রতিফলন। আমাদের স্নায়ুকে সতর্ক থাকতে হবে।”
বরিশাল মহানগর জামায়াত শাখার পক্ষ থেকে মেনে নেওয়া হয়েছে যে, তারা আগামী দিনে জেলা ও উপজেলার সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে জনসমর্থন সংগ্রহ করবে ও বৃহত্তর কর্মসূচি নিয়োজিত হবে যাতে ৫ দফা দাবির বাস্তবায়ন নিশ্চিত হয়।
এই আন্দোলন ঘিরে মঙ্গলবার থেকে নতুন করে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে এখন থেকেই নির্ধারিত নভেম্বরের গণভোটের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা-সচেতনতা বাড়ানো হবে এবং জনগণকে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবিতে পাশে দাঁড়াতে উৎসাহী করা হবে।
নেতৃবৃন্দ আরো একবার জোর দিয়ে বলেন — “আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করতে চাই। প্রশাসনের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও দলীয়করণের উত্থাপন না হলে তা সম্ভব নয়। আমাদের আজই ব্যবস্থা নিতে হবে, কাল নয়।”