সোহেল রানা মাসুদ। ক্রাইম এডিশন। ২৩ এপ্রিল ২০২৫
সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আজ (২৩ এপ্রিল ২০২৫) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে হাজির হন। সেখানে তিনি তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন। পলকের দাবি, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাতে তিনি কোনো ধরনের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তিনি জানান, ওইদিন রাত আড়াইটা পর্যন্ত তিনি জাতীয় সংসদ ভবনের একটি নির্দিষ্ট কক্ষে অবস্থান করছিলেন এবং তার ওপর কোনো ধরনের অপকর্মে অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না।
তবে একই মামলায় সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, তাকে রিমান্ডে রাখার সময় পুলিশ শারীরিক নির্যাতন করেছে। এই অভিযোগকে সরকারি কৌঁসুলি ওমর ফারুক ফারুকী খণ্ডন করে বলেন, “পলক এবং তুরিন উভয়েই হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।” তিনি জানান, এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য ব্যক্তিরাও জড়িত থাকার প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।
আদালত শুনানি শেষে পলকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই সাথে পুলিশকে তাকে হেফাজতে নিয়ে প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। এ রিমান্ডের মাধ্যমে তদন্ত সংস্থা হত্যাকাণ্ডের পিছনের আসল চিত্র উদঘাটন এবং যোগসূত্র নির্ণয়ের চেষ্টা করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত হয়েছে। একদিকে অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বার্থে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা ও রিমান্ডের অপব্যবহার হচ্ছে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যারা কোনো ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের এই মামলার কার্যক্রম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঘটে যাচ্ছে। এর আগে তিনি কয়েকবার বিভিন্ন সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছেন এবং বর্তমানে তার মুক্তি ও নির্দোষ প্রমাণের দাবি করা হচ্ছে।
আইন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ ধরনের মামলা এবং রিমান্ড কার্যক্রম স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদি প্রমাণের যথাযথতা নিশ্চিত না করা হয়। তারা বলছেন, একদিকে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে, অন্যদিকে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার রক্ষাও অত্যন্ত জরুরি।
এই মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দেশের জনগণের কাছে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করার গুরুত্ব বিশেষ। দেশের বিচার ব্যবস্থা যেন রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে ন্যায়বিচার দিতে পারে, সেটিই প্রত্যাশা সকলের।
বর্তমানে তদন্ত সংস্থা এ ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য গোপন রেখেছে। তবে মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণের কাজ চলছে। আগামী দিনগুলোতে মামলার আরও অগ্রগতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্যের ভিত্তিতে নতুন তথ্য সামনে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
সর্বশেষ, বিচারিক প্রক্রিয়া ও রাজনীতির মিশেলে এই মামলা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।