সোহেল রানা মাসুদ | ক্রাইম এডিশন | ১ মে ২০২৫
মহান মে দিবস এবং জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ আলোচনা সভায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের পেশাগত নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে আগত প্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তারা অংশ নেন।
আলোচনায় ড. ইউনূস বলেন, “শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত না করে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন সম্ভব নয়। তাঁদের ঐতিহাসিক অবদান আমাদের জাতিকে প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দেয়। শ্রমিকেরা সমাজের প্রকৃত চালিকাশক্তি, অথচ আজও তাদের অনেকেই ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, শ্রমিকদের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত করা কেবল একটি সামাজিক দায়বদ্ধতা নয়, বরং এটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও মানবিক শিল্পনীতি কেবল তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব, যখন উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে কার্যক্রম পরিচালিত হয়।”
আলোচনায় ড. ইউনূস আরও জানান, বাংলাদেশ আগামী জুন মাসে জেনেভায় অনুষ্ঠিতব্য ১১৩তম আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে অংশ নিতে যাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম মান উন্নয়নের বিষয়ে নতুন দিকনির্দেশনা পাবে।
তিনি বলেন, “শ্রম কমিশনের প্রতিবেদন ও সুপারিশগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্ধারণ করবে। ইতোমধ্যে শ্রম আদালতের কার্যক্রমে গতিশীলতা এসেছে এবং শ্রম আইনের সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা একটি ইতিবাচক অগ্রগতি।”
ড. ইউনূস পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে বলেন, “একজন শ্রমিকের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা শুধু মানবিক দায় নয়, বরং তা উৎপাদনশীলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। নিরাপত্তা ছাড়া কোনো শিল্প খাত টেকসই হতে পারে না।”
সভায় বক্তারা আরও বলেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা প্রদান এখন সময়ের দাবি। এই প্রেক্ষাপটে শ্রমিকদের জন্য একটি শক্তিশালী ও মানবিক নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন বক্তারা।
আলোচনা সভা শেষে এক সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন যে, মহান মে দিবসের চেতনা অনুসরণ করে বাংলাদেশ একটি শ্রমবান্ধব ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে সফল হবে।