সোহেল রানা মাসুদ “ক্রাইম এডিশন”
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫
ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর সীমান্ত এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় ২২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এদের মধ্যে রয়েছে নারী, পুরুষ ও শিশুসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। একইসাথে বিজিবি’র পৃথক অভিযানে সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় মদ, গাঁজা এবং বিভিন্ন নিষিদ্ধ ট্যাবলেট, যা দেশের অভ্যন্তরে মাদকের বিস্তার এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকির ইঙ্গিত দেয়।
রবিবার (১১ মে) এই তথ্য নিশ্চিত করেন মহেশপুরস্থ ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, সীমান্তে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে এবং নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ রোধে বিজিবি সদা তৎপর রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোকে ব্যবহার করে অবৈধ পারাপার এবং মাদক পাচারকারীরা যেভাবে সক্রিয় রয়েছে, তা রোধে এই অভিযানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে জানান তিনি।
বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, মহেশপুর ব্যাটালিয়নের আওতাধীন সীমান্ত ফাঁড়ি কুমিল্লাপাড়া, খোশালপুর ও জীবননগর বিওপি এলাকায় একযোগে অভিযান চালানো হয়। এতে আটক করা হয় মোট ২২ জন বাংলাদেশি নাগরিককে, যারা কোনো বৈধ ভিসা বা অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন। এদের মধ্যে ৪ জন নারী, ৩ জন শিশু এবং ১৫ জন পুরুষ রয়েছেন। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ বিভিন্ন চক্রের মাধ্যমে প্রলুব্ধ হয়ে সীমান্ত পার হচ্ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আটকদের পরিচয় অনুসন্ধান করে জানা গেছে, তারা দেশের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। তাদের মধ্যে রয়েছে নড়াইল, যশোর, রাজবাড়ী, কুমিল্লা, বাগেরহাট, নোয়াখালী এবং খাগড়াছড়ি জেলার নাগরিক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা কাজের সন্ধানে বা আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সীমান্তে এসেছিলেন। তবে তারা এ কাজের জন্য কোনো বৈধ কাগজপত্র বা অনুমতি দেখাতে পারেননি। বিজিবি জানিয়েছে, এদের মধ্যে কিছু শিশু রয়েছে যারা পরিবারের সাথে ছিল।
অন্যদিকে, বিজিবি’র মাদকবিরোধী অভিযানও চলমান রয়েছে। একই দিনে বেনীপুর, উথলী ও রাজাপুর বিওপি এলাকায় আলাদা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এই অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে ৪২ বোতল ভারতীয় মদ, যার বেশিরভাগই ছিল ভারত থেকে পাচার করে আনা নামিদামি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল। এছাড়া উদ্ধার করা হয় ৩ কেজি গাঁজা ও ৯৫২ পিস নিষিদ্ধ ট্যাবলেট, যেগুলো সাধারণত ইয়াবা কিংবা অন্যান্য মাদকদ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বিজিবি’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, সীমান্ত দিয়ে মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে নিয়মিত টহল, তথ্যভিত্তিক অভিযান এবং স্থানীয়দের সহায়তায় গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। বিজিবি’র এ ধরনের সফল অভিযান শুধুমাত্র মাদকদ্রব্য রোধই নয়, বরং সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষকে সচেতন করতেও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সীমান্ত এলাকাকে মাদক ও অবৈধ পারাপারমুক্ত রাখাই তাদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানান বিজিবি’র কর্মকর্তারা।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা এবং আইন লঙ্ঘনের দায়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ এবং প্রশাসন এ বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সার্বিকভাবে, সীমান্তে অবৈধ পারাপার এবং মাদক চোরাচালান বন্ধে বিজিবি’র এমন সক্রিয়তা দেশবাসীর মধ্যে স্বস্তি এবং আস্থার বার্তা দিচ্ছে। তবে সীমান্ত এলাকার মানুষের সচেতনতা, কর্মসংস্থান ও অবৈধ প্ররোচনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।