ক্রাইম এডিশন ডেস্ক” ১৭ মে ২০২৫
মাগুরা জেলার বহুল আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায়ে একজনের মৃত্যুদণ্ড এবং তিনজন আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। শনিবার (১৭ মে ২০২৫) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এই রায় ঘোষণা করেন।
ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ৬ মার্চ। সেদিন আট বছরের শিশু আছিয়া খাতুন মাগুরা শহরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে নির্মমভাবে ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মাগুরা সদর হাসপাতাল এবং পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ, ২০২৫ তারিখে মারা যায় নিষ্পাপ শিশুটি।
এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষ দ্রুত বিচারের দাবি তোলে। পুলিশ দ্রুত তদন্ত করে ১৩ এপ্রিল মামলার চার্জশিট জমা দেয় এবং ২৩ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। টানা শুনানি শেষে মাত্র ১২ কার্যদিবসে শেষ হয় এই মামলার বিচার কার্যক্রম। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৯ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন।
মামলার মূল আসামি হিটু শেখকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। তবে প্রমাণের অভাবে মামলার অন্য তিন আসামিকে আদালত খালাস দেন। বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন, শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো অপরাধে কঠোর বিচার নিশ্চিত করাই সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এই রায়ের মাধ্যমে অনেকেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও খালাস পাওয়া তিন আসামির বিষয়ে আবারও তদন্ত ও আপিলের দাবি তুলেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও মানবাধিকার কর্মীরা। তারা মনে করছেন, মামলার সব আসামির ভূমিকা আরও বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।
শিশু আছিয়ার মতো একটি নিষ্পাপ প্রাণের নির্মম মৃত্যু আমাদের সমাজে নিরাপত্তার অভাব এবং নারী ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তাকে সামনে এনে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া এই মামলায় একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা ভবিষ্যতে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার বিভাগের আন্তরিকতা প্রদর্শন করে।
মামলার রায় ঘোষণার পর মাগুরা আদালত প্রাঙ্গণে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে দ্রুতই উচ্চ আদালতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।