ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ২১ মে ২০২৫
রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় একটি বিতর্কিত ঘটনার জেরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ ইস্যু করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনের নীতিমালা উপেক্ষার অভিযোগে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে বলা হয়েছে তাকে।
বুধবার, ২১ মে ২০২৫ তারিখে এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত একটি অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপট
২০ মে মঙ্গলবার, রাজধানীর ধানমন্ডি থানার আওতাধীন একটি আবাসিক এলাকায় তিনজনকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, ওই তিন ব্যক্তি নিজেকে রাজনৈতিক সংগঠনের ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিলেন। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈবিছাআ) সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি। উল্লেখ্য, তাকে আগেই নৈতিক স্খলনের দায়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
এই পরিস্থিতিতে আবদুল হান্নান মাসউদ নিজ উদ্যোগে ধানমন্ডি থানায় গিয়ে আটক তিনজনের পক্ষে মুচলেকা দিয়ে জামিনের মাধ্যমে মুক্ত করেন। দলীয় সূত্র মতে, বিষয়টি দলীয় নীতিমালার পরিপন্থী হওয়ায় শৃঙ্খলা কমিটি তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয়।
দলের অবস্থান
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “উক্ত ঘটনার ব্যাখ্যা এবং কেন হান্নান মাসউদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা লিখিতভাবে জানাতে হবে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের কাছে।”
এ ঘটনার পর এনসিপির অভ্যন্তরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ কেউ এটিকে হান্নান মাসউদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলেও, অনেকেই বিষয়টিকে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার একটি বড় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
হান্নান মাসউদের ব্যাখ্যা
ঘটনার পরপরই হান্নান মাসউদ নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি সেখানে দাবি করেন, “মোহাম্মদপুর থানার বৈবিছাআ’র কয়েকজন শিক্ষার্থী মব সৃষ্টির চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটক করে। প্রশাসনের অনুরোধে আমি সেখানে যাই এবং মধ্যস্থতা করি।”
তিনি আরও লেখেন, “পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়নি এবং অভিযোগ রুজু না করেই আমাকে বিষয়টি মিটমাট করতে বলে। আমি প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত
বিষয়টি রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, হান্নান মাসউদের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে। আবার কেউ কেউ এটিকে প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষার প্রয়াস বলেও দেখছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, “একজন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তি যদি দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নিজের মতো পদক্ষেপ নেন, তবে তা সংগঠনের অভ্যন্তরীণ নীতিনির্ধারণে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।”
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে তিন দিনের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে এনসিপি।
এই ঘটনার পর হান্নান মাসউদের রাজনৈতিক অবস্থান ও প্রভাব কতটা টিকে থাকবে, তা নির্ভর করছে দলীয় নেতৃবৃন্দের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ওপর।