নিজস্ব প্রতিবেদক
তারিখ: ২৫ মে ২০২৫। সময়: সকাল ১১:৪৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খাদলা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দুইজন বাংলাদেশি যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ভারতের অভ্যন্তরে শ্যামনগর সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন—শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা শের আলীর পুত্র মো. রবিউল ইসলাম (২৮) এবং একই এলাকার মো. আজাদ হোসেন (২৬)। তারা দুজনেই সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন এবং বিভিন্ন সময় কৃষিকাজসহ ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতের আঁধারে কয়েকজন বাংলাদেশি নাগরিক ভারতের ভেতরে প্রায় ১৫০ গজ প্রবেশ করেন। এ সময় ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে ছররা গুলি ছোড়ে। এতে রবিউল ইসলাম ও আজাদ হোসেন আহত হন। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কসবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ৬০ নম্বর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, “আমরা সীমান্তে দুইজন বাংলাদেশি নাগরিক আহত হওয়ার তথ্য পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে তারা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।”
এই ঘটনার পর স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। খাদলা সীমান্ত দীর্ঘদিন ধরেই অনুপ্রবেশ ও সীমান্ত চোরাচালানের জন্য আলোচিত। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রাতে এই সীমান্ত এলাকায় প্রায়ই সন্দেহজনক চলাচল দেখা যায়। তারা বারবার প্রশাসন ও বিজিবিকে নিরাপত্তা জোরদারের অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও সমন্বয় জরুরি। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা করেও সীমান্তে জীবনরক্ষাকারী ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে ছররা গুলি কিংবা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
উল্লেখ্য, সীমান্ত এলাকায় এ ধরনের গুলির ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে, যা দুই দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিক নিহত কিংবা আহত হওয়ার বহু নজির রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কূটনৈতিক পর্যায়ে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সীমান্তে গুলির ঘটনা আমাদের উদ্বিগ্ন করে। নিরীহ মানুষ যেন এভাবে গুলির শিকার না হয়, সে বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তারা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
আহত দুই যুবকের পরিবার তাদের সন্তানদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তারা বলেন, জীবিকার তাগিদে সীমান্তে গিয়েছিল, কিন্তু এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। তাদের চিকিৎসার খরচ এবং আইনি সহায়তার জন্য সরকারি সহায়তাও দাবি করেন তারা।
সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আহতরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে আছেন। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই জানা গেছে।