ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ২৬ মে, ২০২৫।
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সোমবার (২৬ মে ২০২৫) আদালতের হাজতখানার টয়লেটে পড়ে গিয়ে মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এই ঘটনায় আদালতের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দায়ের করা একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিতে তিনি ঢাকার আদালতে হাজির হয়েছিলেন। তবে শুনানি শুরুর আগেই, আদালতের হাজতখানায় থাকা অবস্থায় তিনি টয়লেট ব্যবহার করতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যান এবং মাথায় আঘাত পান। আঘাতের তীব্রতায় তাৎক্ষণিকভাবে রক্তপাত শুরু হয়।
পরে হাজতখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে প্রিজনভ্যানে করে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের চিকিৎসা ইউনিটে নিয়ে যান। সেখানেই তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে।
শারীরিক অবস্থার অবনতি ছিল আগেই
সাবেক এই মন্ত্রীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাসিম মাহমুদ গণমাধ্যমকে জানান, গত কয়েকদিন ধরে কামরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা ভাল ছিল না। তিনি ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও রক্তচাপজনিত সমস্যার কারণে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আগেই ছিল বলে জানান তিনি।
এ ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা নিরাপত্তাকর্মী বা অন্য কেউ উপস্থিত না থাকায় তিনি একা পড়ে যান এবং দুর্ঘটনার শিকার হন। আদালত প্রাঙ্গণে এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার কারণে তার পরিবারের সদস্যরা এবং রাজনৈতিক সহকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মামলার অগ্রগতি ও আদালতের কার্যক্রম
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাটি তার মন্ত্রীত্বকালীন সময়ের কিছু আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ঘিরে। সোমবার ছিল মামলার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্ধারিত তারিখ। তবে দুদক সেদিন কোনো প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
ফলে মামলার পরবর্তী শুনানি ও কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়। আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবেদন দাখিল না করায় মামলার বিচার প্রক্রিয়া আরও বিলম্বিত হতে পারে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ও মানবিক প্রশ্ন
আদালতের হাজতখানার মতো একটি উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন জায়গায় একজন প্রবীণ রাজনীতিক ও সাবেক মন্ত্রীর এমন দুর্ঘটনা কতটা নিরাপদ পরিবেশে বিচারপ্রার্থী থাকা সম্ভব—এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে।
বিশেষ করে, টয়লেটের ভেতরে কোনও সহায়তাকারী বা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় একজন অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তি পড়ে গেলে তাৎক্ষণিক সহায়তা পাওয়া সম্ভব হয় না—এমন অভিযোগও উঠেছে।
বিচারপ্রার্থী ও আসামিদের জন্য সুস্থ, পরিচ্ছন্ন এবং সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এ ঘটনায় তা কতটা নিশ্চিত করা হয়েছে, তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সাবেক খাদ্যমন্ত্রীর এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তৈরি হয়। বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ঘটনাটিকে দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও আদালতের অবকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি উঠেছে। বিশেষ করে, বয়স্ক ও অসুস্থ আসামিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
উপসংহার
সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের আদালতের হাজতখানায় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এটি বড় একটি বার্তা দিচ্ছে—বিচারপ্রার্থী হোক কিংবা সাজাপ্রাপ্ত, প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও মর্যাদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
এই ঘটনায় তদন্ত ও সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন আর কেউ এমন দুর্ঘটনার শিকার না হন, সে বিষয়েও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সচেতন মহল।