ক্রাইম এডিশন ডেস্ক । ২ জুন ২০২৫
জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছে, যেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলাটি নিয়ে ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করে গুম, খুন, নির্যাতন ও রাজনৈতিক দমনপীড়নের মতো অভিযোগগুলো কেন্দ্র করে এ বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের দাবি, এসব কাজ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতাভুক্ত।
তদন্তে উঠে এসেছে, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বহু রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলন, ২০১৪ সালের নির্বাচন ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এসব ঘটনায় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে, যার নেপথ্যে সরকার প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনার ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ এই বিচারকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে এ মামলা প্রত্যাখ্যান করেছে। দলটির নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক, তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সত্য নয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই মামলাটি শুধু একটি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আইনের শাসন, মানবাধিকারের অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারপ্রক্রিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এক গভীর প্রশ্ন তুলেছে। কেউ কেউ বলছেন, এই বিচার দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক সুযোগ—যেখানে ক্ষমতাধরদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ অনেক সংস্থা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়ার দাবি জানিয়েছে।
বর্তমানে মামলাটি প্রাথমিক শুনানির পর্যায়ে রয়েছে এবং বিচারপতিরা প্রমাণ-উপস্থাপন, সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানির তারিখ নির্ধারণ করছেন। আশা করা যাচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই মামলার পূর্ণাঙ্গ বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এই বিচার কেবল শেখ হাসিনার জন্য নয়, পুরো দেশের বিচারব্যবস্থার জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।