ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
রাজধানীর মিরপুরে জনবহুল এলাকায় প্রকাশ্যে দিনের আলোতেই ঘটে গেছে এক ভয়াবহ ডাকাতির ঘটনা। মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে সংঘটিত এই সাহসী হামলায় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা লুট করে নেয় সশস্ত্র এক ডাকাত দল। ঘটনার পরপরই গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) দক্ষ তৎপরতায় ছয়জনকে গ্রেফতারসহ লুণ্ঠিত টাকা, বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (১৭ জুন ২০২৫) ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন—মোঃ জাফর (৩৩), মোস্তাফিজুর রহমান (৪০), সৈকত হোসেন ওরফে দিপু মৃধা (৫২), মোঃ সোহাগ হাসান (৩৪), মোঃ জলিল মোল্লা (৫২) এবং পলাশ আহমেদ (২৬)। এরা সকলে বিভিন্ন অপরাধে পুরনো অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত।
ডিবির তথ্যমতে, ২৭ মে ২০২৫ তারিখে সকাল আনুমানিক ৯:৩০টায় মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী রাসেল ও তার ভগ্নিপতি জাহিদুল হক চৌধুরী তাদের মিরপুর-১১ নম্বর সি-ব্লকের বাসা থেকে ব্যবসার জন্য ২১ লক্ষ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা একটি কালো ব্যাগে করে নিয়ে পায়ে হেঁটে মিরপুর-১০ নম্বরে তাদের অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল ৯:৪০টার দিকে তারা শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ও ফায়ার সার্ভিসের মাঝের গলিতে পৌঁছালে ওঁৎ পেতে থাকা মুখোশধারী ৭-৮ জন ডাকাত তাদের উপর হামলা চালায়।
ডাকাতদের একজন পিস্তল ঠেকিয়ে রাসেলের হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। রাসেল ও জাহিদুল বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে এক ডাকাত ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং অপরজন জাহিদুলকে কোমরে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। জখম হয়ে জাহিদুল রাস্তায় পড়ে গেলে ডাকাতরা মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনাটি এক পথচারী ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করলে তা ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
এই ঘটনায় জাহিদুলের অভিযোগের ভিত্তিতে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়। তদন্তে নামে ডিবির একাধিক দল। আধুনিক প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি হাইয়েস মাইক্রোবাস শনাক্ত করা হয় এবং চালক জাফরকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকা থেকে মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়।
পরবর্তী অভিযানে ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ময়মনসিংহ ও যশোরে অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী জলিল মোল্লাসহ বাকি পাঁচ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৫ লক্ষ ৩ হাজার টাকা, ১০৬টি বিভিন্ন দেশের বৈদেশিক মুদ্রা, ২ লক্ষ ১২ হাজার টাকার জাল নোট, তিনটি মোটরসাইকেল, একটি মাইক্রোবাস, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি এবং তিনটি খেলনা পিস্তল।
ডিবি জানায়, গ্রেফতারকৃতরা পেশাদার ডাকাত এবং তাদের বিরুদ্ধে আগেই ডাকাতি, খুন ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। তারা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, এর আগেও ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ কামরাঙ্গীরচরে ৫০ ভরি স্বর্ণ লুট এবং ২০ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ধানমন্ডিতে ৫২ লক্ষ টাকা লুটে জড়িত ছিল।
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলছে এবং বাকি জড়িতদের গ্রেফতার ও অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply