নুরন্নবী হাসান হিমু, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের রেলপথে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে যেখানে দুইটি ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষের শিকার হয়। ২৮ জুলাই ২০২৫ ইং সোমবার দুপুর ২ টার দিকে লালমনিরহাট রেল স্টেশনের কাছে বুড়িমারী থেকে আসা একটি লোকাল ট্রেন ও ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেসের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। এতে লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায় এবং ব্যাপক ক্ষতি হয়।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার কারণ ছিল সিগন্যাল ত্রুটি। পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে আসা লোকাল ট্রেনটি যখন লালমনিরহাট রেল স্টেশনে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই ঢাকাগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ওয়াশপিটের দিকে চলছিল। এই সময় সিগন্যালের ভুল নির্দেশনার কারণে দুই ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রেলওয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আরএমবি বেনজির আহমেদ জানান, দুর্ঘটনায় যাত্রীদের কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে বেশ কয়েকজন যাত্রী এই সংঘর্ষে আহত হয়েছেন। আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী উদ্ধার কাজ শুরু করে।
এ দুর্ঘটনার কারণে লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত রেল যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি বুড়িমারী থেকে পার্বতীপুরগামী কমিউটার ট্রেনটিও এই দুর্ঘটনার কারণে আটকা পড়ে যায়, ফলে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হয়েছেন। রেল কর্তৃপক্ষ এখন জরুরি ভিত্তিতে লাইন মেরামত ও উল্টে যাওয়া বগিগুলো উদ্ধার করার কাজ শুরু করেছে।
লালমনিরহাট রেলওয়ের লোকো দপ্তরের ডিএমই সাজিদ হাসান বলেন, “দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। তবে যাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের, তারা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ঘটনা তদন্ত করে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এই ধরনের দুর্ঘটনা রেল নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে ঘটছে, যা দ্রুত সংশোধন প্রয়োজন। নিরাপত্তা তদারকি ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধ করার প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তারা মনে করেন।
অন্যদিকে, রেল যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয়রা। তারা আশা করছেন দ্রুত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে এবং হতাহতের মতো দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি মিলবে।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, পুরো এলাকা পরিস্কার করে দ্রুত যোগাযোগ চালু করার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, দুর্ঘটনার কারণ শনাক্ত করে রেল ব্যবস্থায় উন্নতি সাধনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই দুর্ঘটনার ফলে লালমনিরহাট জেলার রেল যোগাযোগে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় জনসাধারণের চলাচল ও পণ্য পরিবহনে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় রেল দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সিগন্যাল ত্রুটি, যান্ত্রিক গোলযোগ ও নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল মূল কারণ। তাই এবারের দুর্ঘটনাটি রেল ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্ত করার প্রয়োজনীয়তা আবারও浮 বোঝাচ্ছে।
সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী, দুর্ঘটনার কারণে এখনো রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজ করছে যাতে এই রেল যোগাযোগ শীঘ্রই চালু করা যায় এবং যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানো যায়।
Leave a Reply