আব্দুস সোবহান মোল্লা, গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের টঙ্গীতে খোলা ড্রেনে পড়ে নিখোঁজ হওয়া এক নারীর লাশ ৩৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের নাম ফারিয়া তাসনিম জ্যোতি (২৬), পেশায় তিনি একটি ওষুধ কোম্পানির কর্মী ছিলেন। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল ৯টার দিকে টঙ্গীর শালিকচুড়া বিল এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তার মরদেহ উদ্ধার করে।
এর আগে রোববার (২৭ জুলাই) রাত ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে একটি খোলা ম্যানহোলে তিনি পড়ে যান। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, তিনি রাস্তার পাশে হাঁটার সময় হঠাৎ অসাবধানতাবশত খোলা ড্রেনের মধ্যে পড়ে যান এবং সেখান থেকে পানির প্রবল স্রোতে ভেসে যান।
নিহত জ্যোতির বাড়ি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মসজিদ পাড়া এলাকায়। তিনি মৃত ওলিউল্লাহ আহাম্মদ বাবলুর মেয়ে। টঙ্গীর হোসেন মার্কেট এলাকাতেই তিনি বাস করতেন এবং নিয়মিত একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি করতেন। ঘটনার সময় তিনি ওষুধ সরবরাহের কাজে ইম্পেরিয়াল হাসপাতালের সামনে দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে টঙ্গী হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা।
উদ্ধারে বিলম্ব ও দায়ীদের অবহেলা
টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. শাহিন আলম জানান, ড্রেনটি শালিকচুড়া বিলে গিয়ে মিশে যাওয়ায় সেখানে উদ্ধার অভিযান চালানো হয়। অবশেষে মঙ্গলবার সকালে তার মরদেহ ড্রেনের পানিপথ ধরে ওই বিলে গিয়ে পাওয়া যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে থাকা ওই ড্রেনটি উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল। কোনো স্লাব বা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড সেখানে ছিল না। এলাকাবাসীর দাবি, এ ধরনের জনবহুল এবং ব্যস্ত এলাকায় খোলা ড্রেন রাখার ফলে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা দায় এড়াতে পারে না।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বিআরটি প্রকল্পের আওতায় ড্রেনের কাজ করা হলেও সেই স্থানটি যথাযথভাবে ঢেকে না রাখার কারণে প্রাণহানি ঘটেছে। একজন নারী কর্মজীবী মানুষকে এমন মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারাতে হবে, তা মেনে নেওয়া দুঃসহ।
স্বজনদের হৃদয়বিদারক প্রতিক্রিয়া
নিহতের বড় ভাই শোভন জানান, ঘটনার পর থেকেই বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তারা নানা স্থানে খোঁজ নিতে থাকেন। পরদিন সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার ব্যবহৃত একটি জুতা দেখতে পেয়ে নিশ্চিত হন যে ঘটনাটি তার সঙ্গেই ঘটেছে।
ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে অভিযান শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ড্রেন থেকে পানির প্রবাহ অনুযায়ী অনুসন্ধান চালিয়ে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিরাপত্তার ঘাটতি ও জননিরাপত্তা হুমকিতে
এ ঘটনা আবারও নগর পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে। অরক্ষিত খোলা ম্যানহোল, ড্রেন বা স্লাববিহীন নর্দমাগুলো সাধারণ মানুষের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ব্যস্ত সড়কের পাশে এমন অব্যবস্থা মৃত্যুকে ডেকে আনার সামিল।
নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অব্যবস্থাপনার দায় অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিতে হবে। মানবিক এবং নিরাপদ নগর গঠনে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
এদিকে, এলাকাবাসী এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এবং নগরের অন্যান্য খোলা ড্রেনগুলোকেও দ্রুত স্লাব দিয়ে ঢাকার দাবি তুলেছে।
Leave a Reply