ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
লালমনিরহাট জেলা পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে আবারো বড় সাফল্য এসেছে। দীর্ঘদিন পলাতক থেকে গা-ঢাকা দেওয়া মাদক মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ তরিকুল ইসলাম এর সার্বিক দিকনির্দেশনায় এক যৌথ অভিযান পরিচালনা করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ ও এন্টি টেররিজম ইউনিট। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ ১৯ আগস্ট ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ তারিখ বিকেল সাড়ে ছয়টার দিকে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামীর নাম মোঃ রবিউল হাসান (২৯)। তিনি লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের লতাবর গ্রামের বাসিন্দা এবং পিতা মোঃ আইয়ুব আলীর ছেলে। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি বিভিন্ন জেলায় পালিয়ে ছিলেন।
তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, মোঃ রবিউল হাসান কালীগঞ্জ থানাধীন সেশন মামলা নং- ২৬৪/২২ ও জিআর মামলা নং- ৩৭/২২ এর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী। শুধু তাই নয়, তার নামে আরও একাধিক মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিআর- ১১৮/২২ ও জিআর- ৩৪/২২ মামলায় আদালতের ভিন্ন মেয়াদে সাজা ঘোষণার ওয়ারেন্ট জারি রয়েছে। একইসাথে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানা ও লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, আসামী রবিউল হাসান দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপন করে ছিলেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তিনি বারবার স্থান পরিবর্তন করতেন এবং গোপনে অবস্থান পরিবর্তন করে মাদক চক্রের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে যেতেন। অবশেষে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।
অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা জানান, মাদক অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ও পলাতক আসামীদের ধরতে পুলিশের বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা আইনের মুখোমুখি হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষও মাদক চক্রের ভয়ঙ্কর প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাচ্ছে।
গ্রেফতারের পর আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে হলে শুধু পুলিশের প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়, বরং সমাজের প্রত্যেক মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা অপরিহার্য
মাদক শুধু একজন ব্যক্তির জীবনকেই ধ্বংস করে না, এটি একটি পরিবার, সমাজ এবং গোটা জাতিকে অন্ধকারে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে যুব সমাজ যখন মাদকের ফাঁদে পড়ে, তখন তারা পরিবার ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। মাদক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধও অপরিহার্য। এজন্য প্রতিটি পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে এবং মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে।
পুলিশি অভিযানের সাফল্য
লালমনিরহাট জেলা পুলিশ বরাবরের মতো এবারও প্রমাণ করেছে যে তারা মাদক ও অপরাধ দমনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে একের পর এক বড় অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এ ধরণের সফলতা সাধারণ জনগণের মধ্যে পুলিশের প্রতি আস্থা বাড়াচ্ছে।
পুলিশের প্রতি সহযোগিতা কামনা
পুলিশ প্রশাসন জানিয়েছে, যেকোনো অপরাধ দমন করতে হলে জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। অপরাধীদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করা প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। অপরাধীর পরিচয় গোপন রেখে তথ্য প্রদান করা যায়, তাই ভয়ের কিছু নেই।
মাদককে না বলুন, সমাজকে সুরক্ষিত করুন। আসুন আমরা সবাই মিলে মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলি এবং পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করি। একমাত্র যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
Leave a Reply