ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
ঢাকা জেলার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি দক্ষিণ) একটি বিশেষ অভিযানে মাদক বিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ও গাঁজা জব্দ করা হয়েছে। এসময় তিনজন পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। ঘটনাটি ঘটে গত ২২ ও ২৩ আগস্ট ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে কেরানীগঞ্জ মডেল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে।
ঢাকা জেলা পুলিশের অভিভাবক হিসেবে পরিচিত সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব মোঃ আনিসুজ্জামান পিপিএম এর দিকনির্দেশনায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) জনাব মোঃ সাইদুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ, ডিবি (দক্ষিণ), ঢাকা জেলা। তার নেতৃত্বে চৌকস ডিবি সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টিম একের পর এক অভিযান চালিয়ে এলাকায় সক্রিয় মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে সক্ষম হয়।
প্রথম অভিযানটি পরিচালিত হয় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন তেঘুরিয়া এলাকায়। গত ২২ আগস্ট রাত আনুমানিক ২২টা ৫৫ মিনিট থেকে ২৩টা ১০ মিনিট পর্যন্ত অভিযান চালানো হয়। এ সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মোঃ রবিন (২৮)। তিনি কুসুমবাগ জুরাইন, পোস্ট ফরিদাবাদ-১২০৪, থানা কদমতলী, ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে এক কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে, পৃথক আরেকটি অভিযান চালানো হয় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার জিনজিরা এলাকায়। এই অভিযান শুরু হয় ২৩ আগস্ট রাত আনুমানিক ০০টা ৪৫ মিনিট থেকে এবং চলে প্রায় ০১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত। এতে আরও দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন হলেন মোঃ মামুনার রশিদ ওরফে মামুন (৩৪)। তিনি কালিগঞ্জ লুজিবটোলা, ডাকঘর বিনোদপুর, থানা শিবগঞ্জ, জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা। মামুনের কাছ থেকে ৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
একই অভিযানে গ্রেফতার হন সাব্বির আহাম্মেদ (৪২)। তিনি দক্ষিণ মহুরীপাড়া (লিংক রোড), থানা কক্সবাজার সদর, জেলা কক্সবাজারের বাসিন্দা। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। ফলে এই অভিযানে মোট ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
এ বিষয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আটককৃত তিনজনই দীর্ঘদিন ধরে পেশাদারভাবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে ইয়াবা ও গাঁজা সংগ্রহ করে রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় সরবরাহ করছিল। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করায় মাদক চক্রটির গুরুত্বপূর্ণ তিনজন সদস্যকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পৃথক থানায় নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা নং-৬০, তারিখ ২৩/০৮/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১) এর ১৯(ক) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। অপরদিকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা নং-৩৮, তারিখ ২৩/০৮/২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে একই আইনের ৩৬(১) এর ১০(ক) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্তমানে আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মাদকবিরোধী এ অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের মতে, কেরানীগঞ্জ এলাকা মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সক্রিয় ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এখানে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা, গাঁজা ও অন্যান্য মাদক দ্রব্যের লেনদেন চলে আসছে। প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানের ফলে মাদকের বিস্তার কিছুটা হলেও রোধ হচ্ছে, তবে পুরোপুরি নির্মূল করতে ধারাবাহিক অভিযানের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু গ্রেফতার বা মাদক উদ্ধারই যথেষ্ট নয়, বরং মাদকের মূল উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধ করতে হবে। একইসাথে মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেমন কাজ করছে, তেমনি সাধারণ মানুষকেও মাদক বিরোধী সামাজিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হবে।
ঢাকা জেলার ডিবি পুলিশের এই সফল অভিযানের ফলে আবারও প্রমাণ হলো, সঠিক নেতৃত্ব এবং গোয়েন্দা তৎপরতা থাকলে মাদক ব্যবসায়ীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তারা আইন থেকে রেহাই পাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
Leave a Reply