নিজস্ব সংবাদদাতা। কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা জেলেপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মোঃ তানবীন ইসলাম নামে এক মোটরসাইকেল আরোহীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৯ আগস্ট ২০২৫) সকাল আনুমানিক ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত তানবীন স্থানীয় কাকিনাহাট মোস্তফাবিয়া কামিল মাদরাসার আলিম ২য় বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে। তার বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছরের মধ্যে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, তানবীন Discover 125 মোটরসাইকেল নিয়ে কাকিনা থেকে জেলেপাড়া এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। ওই সময় বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তীব্রতায় তিনি সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। নিহত তানবীন বেপরোয়া বা অসাবধান ছিলেন না; বরং প্রতিদিন নিয়মিত মোটরসাইকেল চালিয়ে মাদরাসায় যেতেন। সম্ভবত আল্লাহর ফয়সালা এমনই ছিলো।
দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারানোয় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ হয়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ট্রাকটি দ্রুতগামী ছিল এবং চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। সংঘর্ষের পর মোটরসাইকেলটি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত না হলেও আরোহীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ ঘটনায় ট্রাক ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নিহত তানবীনের বিস্তারিত ঠিকানা এখনও নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি পাশের একটি গ্রামে বসবাস করতেন।
সকালে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা স্থানীয় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। প্রতিবেশীরা জানান, তানবীন শান্ত স্বভাবের মানুষ ছিলেন এবং প্রতিদিন কাজের প্রয়োজনে ওই সড়ক ব্যবহার করতেন। দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে তার আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই সড়কে ভারী যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা প্রয়োজন।
লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন সড়কে প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে কাকিনা জেলেপাড়া এলাকার সড়কটি ব্যস্ততম হওয়ায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তার অবস্থা ভালো হলেও ট্রাক ও পণ্যবাহী গাড়িগুলো অতিরিক্ত গতিতে চলাচল করে। এতে করে মোটরসাইকেল ও অন্যান্য ছোট যানবাহন ঝুঁকির মুখে পড়ে।
এলাকাবাসীর দাবি, দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রাক ও ভারী যানবাহনের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা জরুরি। পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকায় গতিসীমা নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড বসানো প্রয়োজন। স্থানীয়রা আরও জানিয়েছেন, প্রশাসন নিয়মিত তদারকি করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে এবং ভবিষ্যতে এমন প্রাণহানি কমে আসবে।
নিহত তানবীনের মৃত্যুর খবর এলাকায় গভীর শোকের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয়রা তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। পরিবার ও পরিচিতজনরা বলেন, “মোটরসাইকেল ও ট্রাকের সংঘর্ষে তানবীন আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেছে। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুন। তার পিতা-মাতা ও পরিবারের সবাইকে আল্লাহ শোক সইবার তৌফিক দিন। আমিন।”
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, নিহতের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে এবং ট্রাক চালককে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
Leave a Reply