ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
আজিমপুরের ছোট মনি নিবাস এলাকায় ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং মঙ্গলবার সকালে ঘটে যায় এক ভীতিকর ঘটনা। মাত্র তিন বছর ছয় মাস বয়সী একটি শিশু হঠাৎ ঘরের ভেতরে আটকা পড়ে যায়। ছোট্ট শিশুটি রুমের ভেতরে আটকে পড়ায় পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিষয়টি দ্রুত স্থানীয়দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং খবর পৌঁছায় ফায়ার সার্ভিসে।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই লালবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। সকাল ৯টা ৫ মিনিটে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি ইউনিট ছোট মনি নিবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যে, অর্থাৎ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তারা উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, শিশু সানি ঘরের ভেতরে খেলাধুলার সময় দুর্ঘটনাক্রমে দরজা আটকে যায়। ঘরে কেউ না থাকায় সে বাইরে বের হতে পারেনি। পরিবার ও আশেপাশের মানুষজন বেশ কয়েকবার দরজা খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। অবশেষে তারা বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসকে জানালে দক্ষ উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ শুরু করেন।
কক্ষের ভেতরে ছোট শিশুর কান্না ও আতঙ্কিত আওয়াজ পরিবারের সদস্যদের আরো উৎকণ্ঠিত করে তোলে। তবে লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরিস্থিতি শান্তভাবে মোকাবিলা করেন। দরজা ভাঙার পরিবর্তে তারা নিরাপদ উপায়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন যাতে শিশুর কোনো শারীরিক ক্ষতি না হয়। অবশেষে নির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করে তারা সফলভাবে শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হন।
উদ্ধারের পর শিশুটিকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় শিশুর পরিবার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দারাও উদ্ধারকাজ দেখে স্বস্তি প্রকাশ করেন। সৌভাগ্যক্রমে শিশুটি কোনো ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি এবং শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে।
সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্ত করে ফায়ার সার্ভিসের দলটি স্টেশনে ফিরে যায়। পুরো ঘটনাটি ঘটে মাত্র ২৫ মিনিটের মধ্যে, যা ফায়ার সার্ভিসের দ্রুত সাড়া দেওয়ার একটি দৃষ্টান্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে বাড়িতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। বিশেষ করে দরজার লক ও জানালা সবসময় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অনেক সময় অল্প অসতর্কতার কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্থানীয়রা মনে করেন, ফায়ার সার্ভিসের এ ধরনের দ্রুত সাড়া না থাকলে পরিবারের আতঙ্ক আরো দীর্ঘস্থায়ী হতো। তাই শুধু আগুন নেভানো নয়, মানুষকে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় ফায়ার সার্ভিসের কার্যক্রম প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে।
শিশুদের নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সমাজকর্মীরাও। তারা বলেন, বাড়িতে শিশুদের খেলার পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অভিভাবকদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে জরুরি প্রয়োজনে কিভাবে ফায়ার সার্ভিসে যোগাযোগ করতে হয়, সেটিও পরিবারগুলোর জানা থাকা উচিত।
আজিমপুরে ঘটে যাওয়া এ ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত সুখের সমাধানে পৌঁছালেও, এটি সবার জন্য একটি সতর্ক সংকেত। ছোটদের নিরাপত্তা অবহেলা করলে বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে। তাই ঘরে শিশু একা রেখে যাওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
লালবাগ ফায়ার সার্ভিসের সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ আবারো প্রমাণ করল, জনগণের নিরাপত্তায় তারা সর্বদা প্রস্তুত। পরিবার ও স্থানীয়দের স্বস্তির নিঃশ্বাসে সকালটির আতঙ্ক কাটল এবং একটি দুর্ঘটনা মর্মান্তিক রূপ নেওয়া থেকে রক্ষা পেল।
Leave a Reply