লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
তিস্তা নদীর বুকে ঘটে গেল এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। নিখোঁজ হওয়ার একদিন পর অবশেষে মিলল ছাত্র মুহিতের নিথর দেহ। মঙ্গলবার (০২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চার বন্ধু মিলে নদীতে মাছ ধরতে নামার পর থেকে মুহিতের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর বুধবার সকালেই তার লাশ ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় স্থানীয় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে লালমনিরহাটের তুষভান্ডার এলাকায় চার বন্ধু মিলে তিস্তা নদীতে মাছ ধরতে যায়। মাছ ধরার আনন্দে মেতে ওঠার এক পর্যায়ে হঠাৎ মুহিত পানিতে তলিয়ে যায়। বন্ধুরা চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা নদীতে নেমে ব্যাপক খোঁজাখুঁজি চালালেও তাকে পাওয়া যায়নি। অবশেষে একদিন পর বুধবার সকালে তার নিথর দেহ ভেসে ওঠে।
মুহিত ছিলেন তুষভান্ডার রমণী মোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষা বর্ষের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তার স্বপ্ন ছিল বড় কিছু করার। জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার জন্য তিনি চীনে পড়াশোনা শেষ করেছিলেন এবং আগামী ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে আবারো চীনে ফেরার কথা ছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, মুহিত ছিলেন নম্র, ভদ্র ও অমায়িক স্বভাবের এক মেধাবী তরুণ। তার চেহারাতেও ছিল এক বিশেষ আকর্ষণ, যা অনেককে মুগ্ধ করত। শুধু পরিবার নয়, আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মাঝেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রিয়। এমন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যতের অধিকারী তরুণের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়।
তার এক বন্ধু বলেন, “আমরা একসাথে নদীতে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখি মুহিত ডুবে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টাও করেছি, কিন্তু তাকে বাঁচাতে পারিনি। এ ঘটনা আমরা কখনও ভুলতে পারব না।”
স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, তিস্তা নদীতে প্রায়ই স্রোতের কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সতর্কতা না মানলে কিংবা সাবধানতার অভাবে অনেক সময় প্রাণহানি ঘটে। মুহিতের মৃত্যু সেই তালিকায় নতুন সংযোজন হলো।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, স্কুল জীবনে মুহিত ছিলেন পড়াশোনায় মনোযোগী ও ভদ্র। সবসময় সহপাঠী এবং শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতেন। তার মৃত্যুতে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শোকাহত।
মুহিতের মৃত্যুতে শোকের মাতম নেমেছে পরিবারে। পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে যেন আল্লাহ মুহিতকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারকে ধৈর্য ধারণের শক্তি দান করেন।
মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা যে কতটা আকস্মিক হতে পারে, মুহিতের অকাল মৃত্যু সেই বাস্তবতাকেই আবারও সামনে এনে দিল। যে তরুণের সামনে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, যে ফেরার অপেক্ষায় ছিল পরিবার ও বন্ধু, সেই মুহিত আজ নেই।
সমাপনী দোয়া
আল্লাহ তরুণ ছাত্র মুহিতের অপূর্ব আত্মাকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন এবং পরিবারকে এই শোক সহ্য করার মতো ধৈর্য দিন। আমিন।
Leave a Reply