নিজস্ব সংবাদদাতা, ঢাকা
রাজধানী ঢাকার বারিধারার একটি অভিজাত হোটেলে ১১ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় এক অনন্য কূটনৈতিক আয়োজনে পালিত হলো Pope’s Feast। ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত (Apostolic Nuncio) মহামান্য আর্চবিশপ কেভিন র্যান্ডালের উদ্যোগে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক নেতা এবং নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির বার্তা বহনকারী এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল এবং সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অংশগ্রহণ করেন। তিনি অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের পক্ষ থেকে পোপের উদ্দেশ্যে প্রেরিত একটি অভিনন্দন বার্তা আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেভিন র্যান্ডালের হাতে।
অভিনন্দন বার্তার মূল বার্তা
অভিনন্দন বার্তায় মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বার্তায় আরও বলা হয়, ন্যায় ও নৈতিকতার ভিত্তিতে একটি সমাজ গঠন করা এবং বৈশ্বিক মানবতার কল্যাণে যৌথভাবে কাজ করা আজকের সময়ে অত্যন্ত জরুরি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আস্থা ও সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।
কূটনৈতিক মহলের প্রশংসা
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ ধরনের উদ্যোগকে সময়োপযোগী বলে অভিহিত করেন। তারা উল্লেখ করেন, Pope’s Feast উদযাপন শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বিশ্বশান্তি, মানবিক মূল্যবোধ ও আন্তধর্মীয় সম্পর্ক জোরদারের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মতো বহুধর্মীয় সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা একটি শক্তিশালী বার্তা প্রদান করে।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশি-বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই সময় পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক শান্তি প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হয়। তিনি বিশ্বাস প্রকাশ করেন যে, আন্তধর্মীয় সংলাপ ও পারস্পরিক সহযোগিতা একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ বিশ্ব গঠনে সহায়ক হবে।
নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ
এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক কর্মকর্তা, বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেন। তাদের উপস্থিতি অনুষ্ঠানটিকে আরও বর্ণিল ও তাৎপর্যমণ্ডিত করে তোলে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বিদ্যমান সম্প্রীতি ও সহযোগিতার সম্পর্ক এই ধরনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন মাত্রা লাভ করছে বলে অংশগ্রহণকারীরা মন্তব্য করেন।
জামায়াত নেতাদের উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেলের পাশাপাশি দলের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসানও উপস্থিত ছিলেন। তারা ভ্যাটিকান দূতাবাস আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সংযোগ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আন্তধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতি দলের অঙ্গীকার ও ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেন।
বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় সম্মিলিত ভূমিকা
অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন যে, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সম্মান জানানো ছাড়া টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। Pope’s Feast-এর মতো আয়োজন শুধু আধ্যাত্মিক দিকেই নয়, কূটনৈতিক এবং মানবিক দিক থেকেও উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে। মুসলিম-খ্রিস্টান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি এটি বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করে তুলবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
শেষকথা
রাজধানীর অভিজাত হোটেলে আয়োজিত Pope’s Feast উদযাপন অনুষ্ঠানটি শুধু ভ্যাটিকান ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সাক্ষ্যই বহন করেনি, বরং এটি মুসলিম ও খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা এবং সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। এই ধরনের উদ্যোগ বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবিক মূল্যবোধ চর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা যায়।
Leave a Reply