আব্দুস সোবহান মোল্লা, গাজীপুর প্রতিনিধি। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গাজীপুর জেলার হাজির পুকুর এলাকায় খোলা ও ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল নগরবাসীর জন্য এক বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি টঙ্গীতে ঘটেছে এমনই একটি দুর্ঘটনা, যেখানে খোলা ম্যানহোলে পড়ে এক নারী গুরুতর আহত হন এবং পরবর্তীতে মারা যান। সেই ঘটনা এখনো মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করছে। গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে হাজির পুকুর মেট্রিক সোয়েটারের অপর পাশে অবস্থিত একটি ম্যানহোল দীর্ঘদিন ধরে খোলা অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, কেউ এই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের দিকে নজর দিচ্ছে না এবং যদি দুর্ঘটনা ঘটে, দায়ভার নেবে কে—সেটা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
টঙ্গীর দুর্ঘটনা সতর্কবার্তা দিচ্ছে
গত কয়েক মাস আগে টঙ্গীর হোসেন মার্কেট সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা গাজীপুরবাসীর জন্য হুমকিস্বরূপ। খোলা ম্যানহোলে পড়ে গুরুতর আহত ওই নারীর মৃত্যু নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসন সেই দুর্ঘটনার পরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা ময়মনসিংহ রোড হাজির পুকুর মেট্রিক সোয়েটার অপর পাশে মেইনরোডে একটি ম্যানহোল ঢাকনাহীন অবস্থায় থেকে গেছে। এর ফলে জনজীবন সবসময় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানহোল ও পানির ভয়
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, বৃষ্টির সময় রাস্তার পানি বেড়ে গেলে ম্যানহোলগুলো সম্পূর্ণভাবে ঢেকে যায়। তখন পথচারী বা যানবাহন সহজেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারে। বিশেষ করে মেট্রিক সোয়েটারের অপর পাশে এই সমস্যা সবচেয়ে প্রকট। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এ পথে চলাচল করে, যার ফলে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
দায়ভার নেবে কে?
বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “যদি টঙ্গীর মতো আবার কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, দায়ভার নেবে কে?” বহুবার অভিযোগ জানানোর পরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা বলছেন, প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তর একে অপরের উপর দায় চাপাচ্ছে, আর সাধারণ মানুষ ভয়ে চলাচল করছে।
প্রশাসনের ব্যাখ্যা ও ধীরগতি
সিটি কর্পোরেশন জানায়, ম্যানহোল ঢাকনা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে অর্থসংকট এবং প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে কাজের গতি ধীর। স্থানীয়রা মনে করেন, এই ধীরগতির কারণে টঙ্গীর মতো দুর্ঘটনা হাজির পুকুর এলাকায়ও ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলেন, ম্যানহোলের ঝুঁকি কমাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। তাদের পরামর্শ:
মানসম্মত ও শক্তপোক্ত ঢাকনা বসানো
নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা
খোলা ম্যানহোলের পাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা
স্থানীয়দের দাবি ও সচেতনতা
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে তারা আন্দোলনের পথ বেছে নেবেন। তাদের একটাই দাবি, “খোলা ম্যানহোলগুলো এখনই ঢেকে দিন, মানুষের জীবন নিয়ে আর খেলা করবেন না।” এছাড়া নাগরিকদেরও চলাচলের সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।
শেষকথা
টঙ্গীর মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, অবহেলার মূল্য কতটা ভয়াবহ হতে পারে। হাজির পুকুর মেট্রিক সোয়েটারের অপর পাশে খোলা এই ম্যানহোল একই ধরনের বিপদের পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে। নগরকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে প্রশাসনের সঙ্গে জনগণের সচেতনতা জরুরি। একমাত্র সম্মিলিত প্রচেষ্টাই গাজীপুরকে দুর্ঘটনামুক্ত ও সুরক্ষিত নগরীতে রূপান্তর করতে পারে।