গাজীপুর প্রতিনিধি:
গতকাল গাজীপুরের টঙ্গীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে জীবন বাজি রেখে আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ ফায়ার সার্ভিসের বীর ফায়ারফাইটার শামীম আহমেদ শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হার মানলেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ গেল একজন নির্ভীক যোদ্ধার
মরহুম শামীম আহমেদ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের একজন অভিজ্ঞ ফায়ারফাইটার ছিলেন। প্রায় দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর পাশাপাশি আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করেছেন। সহকর্মীদের মতে, দায়িত্বের প্রতি তার ছিল এক অনন্য ভালোবাসা এবং অদম্য সাহস।
জীবনের শুরু থেকে দায়িত্বশীলতার গল্প
১৯৮৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন শামীম আহমেদ। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা এবং সাহায্যপ্রবণ। সেই প্রবণতাই তাকে পরে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জরুরি সেবায় যোগ দেওয়ার পথ তৈরি করে দেয়। ২০০৪ সালের ১৬ আগস্ট তিনি বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগ দেন। তারপর থেকে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
পরিবারে শোকের ছায়া
শামীম আহমেদের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার পরিবারে। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী ও তিন সন্তানের জনক ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দেশের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা তাদের কাছে যেমন গর্বের, তেমনি এক অপূরণীয় বেদনার বিষয়।
সহকর্মীদের শোক প্রকাশ
টঙ্গী ফায়ার স্টেশনের অন্যান্য সহকর্মীরা জানিয়েছেন, শামীম ছিলেন অত্যন্ত সাহসী ও আন্তরিক সহকর্মী। তিনি সবসময় সবার আগে বিপদসংকুল জায়গায় ঝাঁপিয়ে পড়তেন। তার মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, পুরো ফায়ার সার্ভিস পরিবার শোকাহত।
এখনও চিকিৎসাধীন আরও কয়েকজন
এ ঘটনায় আহত ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম (৩৫), ফায়ার ফাইটার নূরুল হুদা (৪০) ও জয় হাসান (২৪) বর্তমানে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন। তাদের অবস্থা উন্নতির দিকে হলেও এখনও ঝুঁকিমুক্ত বলা যাচ্ছে না।
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে শ্রদ্ধা ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গ
অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের এমন আত্মত্যাগ আবারও প্রমাণ করল, মানুষের জানমাল রক্ষায় তারা কতটা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা কমাতে হলে শিল্প এলাকা ও গুদামগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
জনগণের প্রতিক্রিয়া
শামীম আহমেদের মৃত্যুতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও শোক ও ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বীরত্ব চিরস্মরণীয় থাকবে
দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করা এই সাহসী ফায়ারফাইটারকে জাতি চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। তার কর্মজীবনের বীরত্বগাথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।