নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় এক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের জেরে ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা বিক্ষোভ করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে মির্জাপুর ইউনিয়নের কিসমত আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ অনুযায়ী, গত সোমবার সকালে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে কক্ষে ডেকে নিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়ার পাশাপাশি স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম। বিষয়টি ঘটনার দিনই বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের জানানো হলেও তারা গুরুত্ব দেননি।
এরই প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন চলাকালে প্রধান শিক্ষক পালিয়ে যান। পরে বিকেলে তার কিছু বহিরাগত সমর্থক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়। খবর পেয়ে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ালে বহিরাগতরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
প্রশাসনের হস্তক্ষেপে নিয়ন্ত্রণ
বিকাল ৩টার দিকে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাস এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুম খান ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা আশ্বাস দেন যে অভিযোগের তদন্ত সুষ্ঠুভাবে করা হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করে।
প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
এক শিক্ষার্থী জানায়, “ওই দিন আমি হেড সারের কক্ষে ছিলাম না, তবে জানালা দিয়ে স্পষ্ট দেখতে পাই আমার বান্ধবীর শরীরে হাত দিচ্ছে এবং ওড়না ধরে টান মারে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সহকারী শিক্ষিকা বন্যা ম্যাডামকে জানাই।”
সহকারী শিক্ষিকা বন্যা বলেন, “মেয়েরা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি অভিভাবকদের নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে।”
প্রশাসনের বক্তব্য
শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নিগ্ধা দাস বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেছি। শিক্ষার্থীরা যার যার বাড়িতে ফিরে গেছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে, অভিযোগ সত্য হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওসি মাসুম খান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। পরে আমি নিজে ইউএনও’র সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বর্তমানে এলাকা শান্ত রয়েছে।”
অভিভাবক ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার পর স্থানীয় অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা জানান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। বরং বহিরাগতদের দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
এদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি—যত দ্রুত সম্ভব অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণ এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা পুনরায় আন্দোলনে নামবেন।
সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
ঘটনার পর থেকেই এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা না গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অশান্ত হয়ে পড়বে এবং অভিভাবকেরা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকবেন।
শেষকথা
বর্তমানে বিদ্যালয়ে পড়াশোনা সাময়িকভাবে স্বাভাবিক হলেও অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের অপসারণ এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ শাস্তির দাবিতে অনড় রয়েছেন। প্রশাসন জানিয়েছে, তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।