
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম: ০৩ অক্টোবর, ২০২৫
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী দুই আপন বোন নিখোঁজ হয়েছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তারা বাড়ি থেকে কলেজে যাওয়ার পথে আর ফেরেননি। এ ঘটনায় নিখোঁজ দুই বোনের বাবা রাজারহাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
গত কয়েকদিন ধরে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। আলোচনায় উঠে এসেছে—নিখোঁজ দুই বোন স্বেচ্ছায় হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন।
নিখোঁজ দুই বোন হলেন— স্নিগ্ধা রানী (২৪) ও পূর্ণিমা রানী (১৮)। তারা রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের প্রাইমারি স্কুলশিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ বর্মনের মেয়ে। স্নিগ্ধা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং পূর্ণিমা একই কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর সকালে তারা একসঙ্গে কলেজের উদ্দেশে বের হন। এরপর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওইদিন থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে বাবা-মা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
শৈলেন্দ্র নাথ বর্মন বলেন,
“১৬ সেপ্টেম্বর সকালে আমি দুই মেয়েকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়ে আসি। সারাদিন বাড়ি ফেরেনি। কোনও বাবা-মায়ের দুই মেয়ে একসঙ্গে নিখোঁজ হলে কী পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা কেবল ভুক্তভোগীরাই বোঝে। তারা আটক বা গুম হয়েছে কিনা তাও আমরা জানি না।”
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী রাশেদুল ইসলাম রনি জানান, নিখোঁজের দিনই (১৬ সেপ্টেম্বর) স্নিগ্ধা ও পূর্ণিমা তার কাছে এফিডেভিট করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন,
“তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এমনকি সুরা ফাতিহা ও সুরা ইখলাস মুখস্থ বলে শোনান। পরে নাম পরিবর্তনের কাগজপত্রের কাজও শুরু করে চলে যান।”
তিনি আরও জানান, ওই সময় তাদের সঙ্গে একজন হুজুর ও কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন। তবে তাদের তিনি চেনেন না। তার ধারণা, ওই ব্যক্তিরাই দুই বোনের খোঁজ জানেন।
নিখোঁজ দুই বোনের সন্ধানে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সম্প্রতি নাগেশ্বরী উপজেলায় একটি বাড়িতে অভিযান চালানো হলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল আলম বলেন,
“নিখোঁজ দুই বোনের সর্বশেষ লোকেশন নিশ্চিত হয়ে আমরা নাগেশ্বরীতে অভিযান চালাই। সেখানে হাসান ফেরদৌস নামে একজনকে পাওয়া যায়। এফিডেভিট করার সময় তিনিও উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছি। তবে বাড়ি তল্লাশিতে সহযোগিতা না করায় অভিযান অসম্পূর্ণ রেখে ফিরে আসতে হয়। এর পরদিন তারা পুলিশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। তবুও দুই বোনের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।”
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন,
“দুই বোনের সন্ধানে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তৎপরতাসহ সব ধরনের প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি শিগগিরই তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে।”