1. info@crimeedition.com : Crime Edition : Crime Edition
  2. masud399340@gmail.com : ক্রাইম এডিশন : ক্রাইম এডিশন
সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ফার্মগেটে মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল আবুল কালামের, শোকের ছায়া হাইওয়ে থানা অভিযানে ৬ কেজি গাঁজাসহ কুমিল্লার মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার বরিশালে জামায়াতের আন্দোলনে ‘জুলাই সনদ’ দ্রুত আইনি স্বীকৃতির জোর দাবি আগামী নির্বাচনে জামায়াত সরকার গঠন করবে: শাহজাহান চৌধুরীর দাবি লালমনিরহাটে অটোরিকশা খাদে পড়ে দুই যাত্রীর মৃত্যু জামালপুরে ২২ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দুই কারবারি গ্রেফতার ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হালুয়াঘাটে তরুণীর মরদেহে নৃশংসতা, ক্ষোভে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় স্কুলছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু হাতীবান্ধায় টাইফয়েড টিকা নেওয়ার পর ১১ শিক্ষার্থী অসুস্থ

ফার্মগেটে মেট্রোরেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল আবুল কালামের, শোকের ছায়া

  • প্রকাশিত: সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট

 

রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি অংশ খুলে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন এক পথচারী। নিহত ব্যক্তির নাম আবুল কালাম (৩৫)। তিনি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। রোববার (২৬ অক্টোবর ২০২৫) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, হঠাৎ করেই মেট্রোরেলের একটি বিয়ারিং প্যাড পিলার থেকে খুলে নিচে পড়ে যায় এবং সেটি সরাসরি আবুল কালামের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

 

দুর্ঘটনার পরপরই চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার মানুষ ছুটে এসে ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। দুর্ঘটনার কারণে কিছু সময়ের জন্য মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পথচারী ও সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত বড় অবকাঠামোর কোনো অংশ যদি এভাবে খুলে পড়ে, তবে তা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

 

আবুল কালামের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলি এলাকায়। পেশায় তিনি ছিলেন এক ট্র্যাভেল এজেন্সির কর্মচারী। জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন সংগ্রামী ও পরিশ্রমী মানুষ। অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে ভাই-বোনদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। পরে নিজের জীবনে পরিবার গড়ে তুলেছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই এক মুহূর্তে সেই পরিবারটিকে নিঃস্ব করে গেল এই দুর্ঘটনা।

 

তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো পরিবারে। স্ত্রী এখন দুই সন্তানকে নিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদের বড় সন্তান প্রায় পাঁচ বছর বয়সী, ছোট মেয়েটির বয়স মাত্র তিন বছর। এই বয়সে দুই শিশুর বাবাকে হারানো—এ যেন এক অপূরণীয় ক্ষতি। ফেসবুক, টিকটক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আবেগপ্রবণ বার্তা লিখছেন। একজন লিখেছেন, “ছবিটা দেখে চোখে পানি চলে এলো। কত ছোট বাচ্চা দুইটা, এখন থেকে ওদের জীবন কেমন হবে কে জানে।”

 

গ্রামের মানুষরা জানায়, আবুল কালাম ছিলেন খুবই নম্র, ভদ্র ও পরিশ্রমী। সবার সঙ্গে তার আচরণ ছিল মধুর। তিনি পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ছিলেন এক অনন্য ভরসা। অনেকেই বলছেন, এমন একজন মানুষের মৃত্যু স্রেফ দুর্ঘটনা বলে মেনে নেওয়া কঠিন। কিছুদিন আগে তার ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “ইচ্ছে তো অনেক… আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম।” সেই পোস্ট এখন অনেকের চোখে জল এনেছে। যদিও এই দুর্ঘটনার সঙ্গে পোস্টটির কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও সেটি এখন আলোচনা তৈরি করেছে।

 

দুর্ঘটনার পর ঢাকা মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিয়ারিং প্যাডের নাট ঢিলে হয়ে যাওয়ায় সেটি খুলে পড়ে যায়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে।

 

রাজধানীতে এমন দুর্ঘটনা নতুন নয়, তবে মেট্রোরেলের মতো আধুনিক অবকাঠামোর অংশ খুলে কারো প্রাণ যাওয়ার ঘটনা নাগরিকদের মনে ভয় তৈরি করেছে। অনেকেই বলছেন, এমন উন্নয়ন প্রকল্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে কোনো সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।

 

এদিকে, শরীয়তপুরের ঈশ্বরকাঠি গ্রামের বাড়িতে চলছে কান্নার রোল। ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। গ্রামের এক আত্মীয় বলেন, “ছোটবেলা থেকেই কালাম পরিশ্রমী ছিল। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সে-ই পরিবারের হাল ধরেছিল। এখন তার দুই বাচ্চাকে কে আগলে রাখবে?”

 

আবুল কালামের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং সমাজের অনেক মানুষের হৃদয়ে ব্যথা তৈরি করেছে। একজন সাধারণ পরিশ্রমী মানুষ, যিনি প্রতিদিনের মতো কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন, আর কখনো বাড়ি ফিরতে পারেননি—এ যেন জীবনের এক নির্মম বাস্তবতা। তার দুই সন্তান আজ বাবাহারা, তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।

 

সবাই একবাক্যে বলছেন, “আল্লাহ যেন কালাম ভাইকে জান্নাত নসিব করেন এবং তার সন্তানদের জীবন সহজ করে দেন।” এমন দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে যেন কর্তৃপক্ষ আরও সতর্ক হয়, সেই প্রত্যাশাই এখন দেশের সাধারণ মানুষের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© ২০২৫, ক্রাইম এডিশন, সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।

Theme Customized BY LatestNews