
নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় একটি নির্বাচনী সভায় দেয়া বক্তব্যকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান ওরফে সাগরের একটি বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ভিডিওতে তিনি জামায়াতে ইসলামীকে ভোট দেয়ার বিষয়ে কঠোর ভাষায় মন্তব্য করেছেন—এমন অভিযোগ ওঠে, যা স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্কের জন্ম দিয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার নড়িয়া উপজেলার বাংলাবাজার এলাকায়। সেখানে একটি নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে কথা বলেন। ওই সময়ের একটি ভিডিও তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে লাইভ সম্প্রচার করা হয় বলেও স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। পরে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, বিএনপিকে ভোট না দিলে ভোটাররা ঘরে থাকতে পারেন, তবে জামায়াতকে ভোট দিয়ে শান্তিতে থাকার সুযোগ দেয়া হবে না—এমন ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য তিনি দেন। এ বক্তব্যকে অনেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী হিসেবে দেখছেন। ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তা ও স্বাধীন মত প্রকাশ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।
ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার মুখে পড়ে মতিউর রহমান তার ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি সরিয়ে ফেলেন। তবে এর মধ্যেই অনেকে ভিডিওটি ডাউনলোড করে পুনরায় বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে থাকেন। এতে করে বিষয়টি আরও বিস্তৃতভাবে আলোচনায় আসে।
পরবর্তীতে এক ফেসবুক লাইভে মতিউর রহমান দাবি করেন, তার বক্তব্যকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হতে পারে। তিনি বলেন, ভিডিওতে যে বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, সেটি তার আসল বক্তব্য নয়। তবে এই দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রযুক্তিগত প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
এ বিষয়ে নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ বলেন, সংশ্লিষ্ট বক্তব্যটি দলের আনুষ্ঠানিক অবস্থান নয়। তিনি জানান, বিষয়টি দলীয়ভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের শীর্ষ নেতারা ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
অন্যদিকে, শরীয়তপুর–২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বকাউল বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য অনাকাঙ্ক্ষিত। তার মতে, বর্তমান ভোটাররা সচেতন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনমূলক বক্তব্য গণতান্ত্রিক পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
নির্বাচন প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ুম খান জানান, নির্বাচনী আচরণবিধি সবাইকে মেনে চলতে হবে। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে নির্বাচন আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বক্তব্যটির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানাচ্ছেন। সব মিলিয়ে, একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করে নড়িয়া উপজেলার রাজনৈতিক পরিবেশে উত্তাপ ছড়িয়েছে এবং বিষয়টি এখনো আলোচনার মধ্যেই রয়েছে।