
ফজলে রাব্বী হৃদয়, রংপুর প্রতিনিধি:
আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে প্রথম প্রহরে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। দিবসটির সূচনালগ্নে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের স্মরণ করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন। এ সময় শহীদ মিনার এলাকাজুড়ে ছিল গাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ, শৃঙ্খলা এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ মানুষের উপস্থিতি।
সূর্যোদয়ের আগেই শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। রাতের নীরবতা ভেঙে একের পর এক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর অনেকেই নীরবে দাঁড়িয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
এদিন রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার অবদান স্মরণ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান। বক্তব্যে নেতারা বলেন, স্বাধীনতার আদর্শকে ধারণ করে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। শহীদ মিনার এলাকায় প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য নির্দিষ্ট পথ নির্ধারণ করা হয়, যাতে শ্রদ্ধা নিবেদন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবকরা আগতদের সারিবদ্ধভাবে ফুল দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
অনুষ্ঠান শেষে অনেকেই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের মতে, ১৬ ডিসেম্বর শুধু একটি ঐতিহাসিক দিন নয়, এটি আত্মত্যাগ, সংগ্রাম ও গৌরবের প্রতীক। এই দিনটি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার অনুপ্রেরণা জোগায় এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। তারা আরও বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ বাস্তবায়নে দুর্নীতি, বৈষম্য ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
রংপুর শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরাও এদিন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে শহীদদের স্মরণ করে। দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রস্তুতি লক্ষ্য করা যায়।
সার্বিকভাবে, মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ছিল শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও মর্যাদাপূর্ণ। এই আয়োজন আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়—দেশের স্বাধীনতা অর্জনে যে ত্যাগ স্বীকার করা হয়েছে, তা কখনোই বিস্মৃত হওয়ার নয়।