ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ১৪ মে ২০২৫
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেধাবী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার সাম্য (২৫)। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। সাম্য একইসঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্স প্রোগ্রামের ছাত্র ছিলেন। তাঁর স্থায়ী ঠিকানা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার অন্তর্গত একটি গ্রামে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) দিবাগত রাত আনুমানিক ১২টার দিকে শাহরিয়ার সাম্য রক্তাক্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, তার ডান পায়ে ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত ছিল। মরদেহ বর্তমানে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, নিহত সাম্য রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুক্তমঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন অপর একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার বাইকের সংঘর্ষ হয়। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতি শুরু হয়। এক পর্যায়ে অপর পক্ষের একজন বা একাধিক ব্যক্তি সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এই ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসজুড়ে চরম উদ্বেগ এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সহপাঠী ও বন্ধুরা এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সাম্য ছিলেন এফ রহমান হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর জানান, ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে। পুলিশ সম্ভাব্য সব দিক থেকেই তদন্ত করছে, তবে এখনো কাউকে শনাক্ত বা গ্রেপ্তার করা যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থার দুর্বলতার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রায়ই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও তার আশপাশে বাইরের লোকজনের আনাগোনা থাকে। এর ফলে অনেক সময় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। এই হত্যাকাণ্ড সেই নিরাপত্তার ঘাটতির একটি চরম উদাহরণ বলে মনে করছেন অনেকে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শাহরিয়ারের মৃত্যু শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি বড় ধরনের প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল, তাহলে আরও গভীর ষড়যন্ত্রের বিষয় সামনে আসতে পারে।
এদিকে শাহরিয়ারের পরিবারের সদস্যরা ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গেছেন। তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।