ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫
ঢাকা: ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুকে রাজধানীর আফতাব নগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দিবাগত রাত প্রায় ৩টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ডিসি তালেবুর রহমান জানান, ২০২৩ সালের ২৬ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় দায়েরকৃত একটি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে সাবেক এমপি ধনুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেছিলেন নিহত মোহাম্মদ আরিফের বাবা মোহাম্মদ ইউসুফ।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই দুপুরে যাত্রাবাড়ীর উত্তর কুতুবখালী এলাকার বউবাজার রোডে মাদরাসার সামনে একটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হন মোহাম্মদ আরিফ (১৮)। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর নিহত আরিফের বাবা বাদী হয়ে মোট ২৪৩ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার ১৪ নম্বর আসামি হিসেবে কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনুর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ডিএমপি জানায়, শুধুমাত্র এই মামলাতেই নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আরও তিনটি মামলায়ও কাজিম উদ্দিন ধনুর নাম রয়েছে। প্রতিটি মামলাতেই তিনি এজাহারভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা ও হামলার অভিযোগ রয়েছে এবং এসব অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এতগুলো গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তার গ্রেপ্তারকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের গুরুতর অপরাধে জড়িতদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নয়, বরং অপরাধই মুখ্য বিবেচ্য। যেকোনো অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, কাজিম উদ্দিন আহম্মেদ ধনু ময়মনসিংহের ভালুকা আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে একাধিকবার সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিকভাবে ততটা সক্রিয় ছিলেন না বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। তাঁর গ্রেপ্তারের পর দল থেকেও আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি।
এদিকে, নিহত আরিফের পরিবার দ্রুত বিচার ও ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, “আমাদের সন্তানের হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পেতে আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।”
বর্তমানে গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এমপিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনি প্রক্রিয়ার জন্য রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।