ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
জামালপুরে ঘটে যাওয়া এক নারকীয় ঘটনার পর চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী বুলী বেগমের মৃত্যু এবং দীর্ঘ তদন্তের পরে অবশেষে এই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মোঃ জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। টাঙ্গাইলের গোপালপুর থানাধীন বালুবাড়ী গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় এক সফল অভিযানে।
ঘটনার পেছনের করুণ ইতিহাস:
ভিকটিম বুলী বেগম (৩৫) জামালপুর জেলার পাঁচগাছি গ্রামের বাসিন্দা। তার স্বামী মোঃ মুগল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে, সৌদি আরবে কর্মরত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলম (৪০) তাকে বারবার অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এসব প্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে বুলী বেগমের বাড়িতে ঢুকে সে তাকে ধর্ষণ করে।
এই নির্মম ঘটনার পর বুলী বেগম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। সামাজিক লজ্জা ও চাপে পড়ে ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানো হয়। এতে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। দীর্ঘ চিকিৎসার পর শেষ পর্যন্ত ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
আইনি প্রক্রিয়া ও অভিযানের অগ্রগতি:
ভিকটিমের পিতা মোঃ আবু বকর দুদু ১৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে জামালপুর থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর-৫১)। মামলার পরপরই জামালপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি বিশেষ দল অভিযানে নামে। ওসি (ডিবি-১) জনাব মোঃ নাজমুস সাকিব এর নেতৃত্বে এবং এসআই মোঃ আব্দুল্লাহ আল আজাদ ও এসআই আব্দুল মতিনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে ১৪ জুন রাত ১০টা ২০ মিনিটে টাঙ্গাইলের বালুবাড়ী এলাকা থেকে আসামি জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য:
ওসি, ডিবি-১ জনাব মোঃ নাজমুস সাকিব বলেন:
“এই জঘন্য ঘটনার পেছনে আমরা প্রথম থেকেই অপরাধীকে খুঁজে বের করার অঙ্গীকারে দৃঢ় ছিলাম। দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে অবশেষে আমরা মূল অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।”
জামালপুর জেলার পুলিশ সুপার জনাব সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, পিপিএম-সেবা জানান:
“এই ঘটনা আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। ডিবি পুলিশের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ফলেই আজ এই অপরাধী গ্রেফতার হয়েছে। জামালপুর জেলা পুলিশ সবসময় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট এবং নির্যাতিতদের পাশে আছে।”
পরবর্তী পদক্ষেপ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি, ভিকটিমের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ সক্রিয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ভিকটিম পরিবারের প্রতি সহমর্মতা:
এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিহত বুলী বেগমের পরিবারকে সহানুভূতির সাথে দেখা হচ্ছে। তার জীবনের করুণ পরিণতি যেন সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা হয়—এমনটাই প্রত্যাশা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সবসময় সচেতন এবং সজাগ থাকবে।
Leave a Reply