ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
সিরাজগঞ্জ জেলার চৌহালীর দুর্গম চরাঞ্চলে এক নির্মম খুন ও গরু ডাকাতির ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ঘটনাটি ঘটে ২০ মে ২০২৫ তারিখে রাতে, যেখানে এক নিরীহ খামারি খুন হন এবং তার খামারের তিনটি গরু লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। দীর্ঘ তদন্ত ও গোয়েন্দা তৎপরতার পর ডিবি পুলিশ আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এবং একটি ষাঁড় গরু উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০ মে ২০২৫ তারিখে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চৌহালী থানার ঘোরজান ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকার যমুনা নদীর কাউলিয়ার চরে নিজের খামারে যান ৬৫ বছর বয়সী খামারি তারা মিয়া ও তার ১৮ বছর বয়সী নাতি মোঃ ইব্রাহিম খলিল। রাতের খাবারসহ তারা ওই চরে রাত যাপনের জন্য প্রস্তুতি নেন এবং রাত সোয়া নয়টার দিকে ঘুমিয়ে পড়েন।
কিন্তু মধ্যরাতে, রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে, ১০ থেকে ১২ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাতদল ছাপড়া ঘরে হানা দেয়। তারা দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে খামারি ও তার নাতিকে হাত, পা, মুখ ও চোখ বেঁধে ফেলে এবং খামারের দুটি ষাঁড় ও একটি গাভী গরু লুট করে পালিয়ে যায়। ডাকাত দলের চলে যাওয়ার পর অনেক কষ্টে ইব্রাহিম বাঁধন খুলে পাশের লোকজনকে খবর দেয়। তারা এসে দেখে, তারা মিয়াকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাকে মুক্ত করার পর ডাকাডাকি করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। নিশ্চিত হওয়া যায়, ডাকাতরা গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেছে।
ঘটনার পরপরই চৌহালী থানায় একটি হত্যা ও ডাকাতির মামলা রুজু হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে সিরাজগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক হোসেনের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল) মোঃ কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা ও ডিবি অফিসার ইনচার্জ মোঃ একরামুল হোসাইন, পিপিএম এর নেতৃত্বে একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করা হয়।
তদন্তকারী দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এবং ধারাবাহিক গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে ডাকাত দলের অবস্থান নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সাতজন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো:
মোঃ ইউসুফ আলী (২৮), বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ
মোঃ শাহ আলম (৪০), কালিহাতী, টাঙ্গাইল
মোঃ হাসান মন্ডল (২৫), টাঙ্গাইল সদর
মোঃ আমির হোসেন (৪৫), টাঙ্গাইল সদর
মোঃ শাহিদ @ সাঈদ (৪১), ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল
মোঃ আঃ মালেক (২৮), সিরাজগঞ্জ
মোঃ ইসমাইল ব্যাপারী (৫৩), টাঙ্গাইল
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে একটি ষাঁড় গরু উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ২০ মে রাতে দুটি নৌকায় করে ১৭/১৮ জনের একটি দল চরে আসে। এর মধ্যে ১১/১২ জন ছাপড়ার ঘরে ঢুকে গরু ও মানুষ দেখতে পায়। তারা মিয়া ও তার নাতি জেগে ওঠায় তাদের উপর আক্রমণ করে এবং বেঁধে ফেলে। পরে তিনটি গরু নিয়ে তারা পালিয়ে যায় ও পরদিন পুংলী ঘাটে সেগুলো বিক্রি করে মোট ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ভাগ করে নেয়। প্রত্যেক ডাকাত ৫ হাজার টাকা করে পায়।
ডাকাত দলের সাতজন সদস্যই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এই অভিযান ও গ্রেপ্তার অভিযানে জেলা ডিবি পুলিশের নিরলস প্রচেষ্টা, দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে।
এ ঘটনায় আরও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Leave a Reply