সোহেল রানা মাসুদ। ক্রাইম এডিশন।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার বিকেলে আয়োজিত জাতীয় সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। সমাবেশের শেষ দিকে ডায়াসে উঠে বক্তব্য রাখার কিছুক্ষণ পরই তিনি শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে মঞ্চে পড়ে যান।
তার আকস্মিক অসুস্থতায় মঞ্চে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মুহূর্তেই উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। দ্রুত এগিয়ে এসে তারা তাকে সামলে নেন এবং সহায়তা করেন। কিছু সময় বিশ্রামের পর তিনি পুনরায় উঠে দাঁড়িয়ে বসা অবস্থাতেই বক্তব্য চালিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বক্তব্যের এক পর্যায়ে জামায়াত আমির হঠাৎ কাঁপতে থাকেন এবং ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে যান। তবে তার মনোবল দৃঢ় থাকায় তিনি অল্প সময়েই নিজেকে সামলে নিয়ে বক্তব্য পুনরায় শুরু করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বক্তব্যের শুরুতে বলেন, “২৪ সালের আন্দোলন যদি না হতো, তাহলে আজ যারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরছেন তারা কোথায় থাকতেন? তাই আসুন তাদের ত্যাগকে মূল্যায়ন করি, যারা আন্দোলনের অগ্রনায়ক ছিলেন তাদের অবদান ভুলে না যাই। অহংকার করে অন্যদের ছোট করে দেখা উচিত নয়। যদি তা করি, তবে বুঝতে হবে ফ্যাসিবাদের বীজ আমাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ যতদিন হায়াত দিয়েছেন, ততদিন মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। ইনশাআল্লাহ। এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করব। যদি দেশের জনগণ আমাদের ওপর আস্থা রাখে, তাহলে আমরা তাদের প্রকৃত সেবক হিসেবে কাজ করব, মালিক হিসেবে নয়।”
সমাবেশে উপস্থিত হাজারো কর্মী-সমর্থক তার এ বক্তব্যে উজ্জীবিত হয়ে পড়ে এবং করতালির মাধ্যমে সমর্থন জানান।
অসুস্থতার পর পুনরায় বক্তব্যে তিনি দলীয় অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। তিনি ঘোষণা দেন, “ভবিষ্যতে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হলে তারা সরকারি প্লট গ্রহণ করবে না, করমুক্ত গাড়ি ব্যবহার করবে না, সরকারি টাকা নিজের হাতে পরিচালনা করবে না। বরাদ্দ পাওয়া যেকোনো কাজের শেষে যথাযথ প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আমরা চাঁদা নেব না, দুর্নীতিও করব না। যারা চাঁদা নিতে চায় বা দুর্নীতি করে, তাদের আমরা সহ্য করব না। আমরা একটি সুশাসনভিত্তিক বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে জবাবদিহিতা থাকবে এবং রাজনীতিকদের সেবামূলক ভূমিকা নিশ্চিত হবে।”
ডা. শফিকুর রহমানের অসুস্থতা নিয়ে সমাবেশস্থলে বেশ কিছু সময় চাঞ্চল্য তৈরি হলেও, তার দৃঢ় মনোভাব ও সমাবেশে ফিরে আসায় নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।
পরবর্তীতে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তিনি দ্রুতই চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন এবং বর্তমানে স্থিতিশীল রয়েছেন। তার সুস্থতার জন্য দলীয়ভাবে দোয়া কামনা করা হয়।
এদিকে, তার অসুস্থতার খবর জানার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও হাসপাতালে গিয়ে তার খোঁজখবর নিয়েছেন। এদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব, দলীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবসহ আরও অনেকে ছিলেন।
এই ঘটনাটি দেশের রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও নানা প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
Leave a Reply