সোহেল রানা মাসুদ। ক্রাইম এডিশন
জাতীয় সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে তিনজন নিবেদিতপ্রাণ ইসলামী নেতার মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। ২০ জুলাই (শনিবার) গণমাধ্যমে পাঠানো এক শোকবার্তায় তিনি এই শোক ও সমবেদনা জানান।
বিবৃতিতে জামায়াত আমীর বলেন, “এই তিনজন ভাই ছিলেন সত্যের পথে নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক। তাঁরা ইসলামী আন্দোলনের প্রতি অকুণ্ঠ ভালোবাসা ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে জাতীয় সমাবেশে যোগদানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমি তাঁদের ইন্তিকালে গভীরভাবে শোকাহত এবং মহান আল্লাহর দরবারে তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা যেন তাঁদেরকে শহীদের মর্যাদা দান করে জান্নাতুল ফিরদাউসের সর্বোচ্চ স্থান দান করেন।”
তিনি আরও বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহত যারা হয়েছেন, তাদের প্রতিও আমি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ যেন তাঁদের দ্রুত আরোগ্য দান করেন—এই দোয়া করছি। একইসঙ্গে নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি আমি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। মহান রব যেন তাদের ধৈর্য ধারণের তাওফিক দান করেন এবং এই শোক সহ্য করার শক্তি দান করেন।”
ঘটনার বিস্তারিত প্রসঙ্গে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকা অভিমুখে রওনা হন। তবে পথিমধ্যে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান খুলনার দাকোপ উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবু সাঈদ এবং পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার মোস্তাফিজুর রহমান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এই দুর্ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী গুরুতরভাবে আহত হন। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
অন্যদিকে, সমাবেশস্থলেই আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। রংপুর জেলার শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি সমাবেশ চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাঁকে দ্রুত ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত সেন্ট্রাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
এই শোকাবহ ঘটনাগুলো জামায়াতসহ দেশের ইসলামপ্রিয় মানুষের হৃদয়ে গভীর দাগ কেটেছে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা তাদের সহযোদ্ধা ভাইদের মৃত্যুতে শোকাহত হলেও তাঁদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছেন। অনেকেই মনে করছেন, এই তিন ভাই ইসলামী আন্দোলনের জন্য জীবন উৎসর্গ করে শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন বৃহৎ সমাবেশে যোগ দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা বা আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা সকলের জন্যই সতর্কবার্তা বহন করে। সংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে সমাবেশ বা যেকোনো জাতীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পূর্বে যাতায়াত ব্যবস্থার নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এই জাতীয় সমাবেশ ঘিরে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। দেশজুড়ে কঠোর প্রস্তুতির মাধ্যমে লাখো মানুষের ঢল নামে ঢাকার পথে। কিন্তু এই পথযাত্রার মধ্যেই ঘটে যাওয়া মৃত্যু এবং দুর্ঘটনা পুরো দলকে শোকাভিভূত করে তুলেছে।
তিনজন নেতার মৃত্যু এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করে দেশজুড়ে জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের শাখা থেকে বিশেষ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এই দুঃখজনক ঘটনার মধ্যেও জামায়াত আমীরের বার্তা নেতা-কর্মীদের মাঝে নতুন করে সাহস এবং ধৈর্যের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে। তিনি তাঁর বিবৃতিতে ইসলামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার এবং শহীদদের রক্তের অঙ্গীকার পূরণের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
Leave a Reply